জলেশ্বরী

কুড়িগ্রামের রৌমারীতে এসএসসি’র ফরম পূরণে অতিরিক্ত অর্থ আদায়ের অভিযোগ!

রৌমারী প্রতিনিধি:

শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের নির্দেশনা অমান্য করে কুড়িগ্রাম জেলার রৌমারীতে এসএসসি পরীক্ষার্থীদের কাছ থেকে ফরম পূরণে অতিরিক্ত ফি আদায়ের অভিযোগ পাওয়া গেছে। বেশির ভাগ মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে নেয়া হচ্ছে অতিরিক্ত টাকা। চলতি বছরের ২৯ সেপ্টেম্বর দিনাজপুর শিক্ষা বোর্ডের এক নির্দেশনায় অতিরিক্ত ফি আদায় না করার জন্য বলা হলেও সে নির্দেশনা মানছে না বেশিরভাগ মাধ্যমিক বিদ্যালয়গুলো।

দিনাজপুর শিক্ষা বোর্ডের ফরম পূরণ বিজ্ঞপ্তিতে ফি নির্ধারণ করা রয়েছে, বিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে এসএসসির ফরম পূরণ বাবদ বিজ্ঞান বিভাগে সর্বোচ্চ ১ হাজার ৯০৫ টাকা, ব্যবসায় শিক্ষা বিভাগের পরীক্ষার্থীদের থেকে সর্বোচ্চ ১ হাজার ৮৫০ টাকা এবং মানবিক বিভাগের শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে সর্বোচ্চ ১ হাজার ৮৫০ টাকা ফি নিতে প্রতিষ্ঠানগুলোকে বলেছে দিনাজপুর মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা বোর্ড।

রৌমারী উপজেলার দাঁতভাঙ্গা স্কুল অ্যান্ড কলেজের কয়েকজন শিক্ষার্থীর অভিভাবক জানান, ৪ নভেম্বরের দশম শ্রেণির নির্বাচনী পরীক্ষার ফল প্রকাশের দিন স্কুল থেকে ১১ নভেম্বর ফরম পূরণের শেষ দিন বলে জানানো হয়। এ সময় টেস্ট পরীক্ষায় অংশগ্রহনকারী সকল শিক্ষার্থীদের কাছে ২ হাজার ৬শ টাকা নিয়ে উপস্থিত থাকার জন্য বলেন সহকারি প্রধান শিক্ষক আব্দুর রহিম।

এতে বিপাকে পড়েন অনেক অভিভাবক। অতিরিক্ত টাকা জোগাড় করা অনেকের জন্য কষ্টসাধ্য হয়ে পড়ে।

শিক্ষার্থী অভিভাবক চরশৌলমারীর ছাইদুর রহমান, দাঁতভাঙ্গার হাবিবুর রহমান, বড়াইকান্দির সফিযার বলেন, আমাদের কাছ থেকে ফরম পূরণ বাবদ বিজ্ঞান বিভাগের জন্য ২ হাজার ৬০০ টাকা, মানবিক ও বাণিজ্য বিভাগের জন্য ২ হাজার ৪শ ৫০ টাকা করে নেয়া হচ্ছে। স্কুল থেকে অতিরিক্ত টাকা আদায়ের কোনো রশিদ দেয়া হচ্ছে না। তবে বাড়তি ফি নেয়ার ব্যাপারটি আড়াল না করেই সরাসরি নোটিশ বোর্ডে টাঙিয়ে দিয়েছেন ফি’র তালিকা।

বাণিজ্য বিভাগের জাহাঙ্গীর আলম নামের শিক্ষার্থী বলেন, আমার কাছ থেকে ২ হাজার ৬০০ টাকা রাখা হয়েছে। কোনো রশিদ দেয়া হয়নি। আমরা রশিদ চাইলে দেয়া যাবে না বলে জানান সহকারি প্রধান শিক্ষক আব্দুর রহিম। স্কুল রেকর্ডে আমার আগের কোনো টাকা বকেয়া নেই।

চর শৌলমারী উচ্চ বিদ্যালয়ে এসএসসি ফরম পূরণে প্রতি শিক্ষার্থীর কাছ থেকে ২ হাজার ৩শ ৫০টাকা নেওয়া হচ্ছে। ওই স্কুলে একাধিক শিক্ষার্থী হাসান মোল্লা, নাজমুন্নাহার, ওয়াসিম জানান, আমাদের কাছ থেকে ফরম পূরণ বাবদ ২ হাজার ৩শ ৫০ টাকা নিয়েছে। স্যারেরা রশিদও দিয়েছে। রশিদে দেওয়া আছে, ফরম পূরণ বোর্ডের নিদ্ধারিত ফি’র টাকাসহ উন্নয়ন ফি ৩০০ টাকা ও বোর্ডে যাতায়াত ফি ২০০ টাকা আদায় করা হয়েছে।

ফরম পূরণে অতিরিক্ত টাকা নেওয়ার বিষয় জানতে চাইলে স্কুলের প্রধান শিক্ষক খলিলুর রহমান জানান, ফরম পূরণের টাকা আমি একা নেইনি আমার প্রতিষ্ঠানের গর্ভানিং বর্ডির সভাপতি ও স্টাফের আদেশে আমি অতিরিক্ত টাকা নিয়েছি। কিন্তু আমার ফরম পূরণের রশিদ রয়েছে।

শৌলমারী এমআর স্কুল অ্যান্ড কলেজে এসএসসি ফরম পূরণে প্রত্যেক ছাত্র ও ছাত্রীর কাছ থেকে ২ হাজার ৫শ থেকে ৩ হাজার টাকা নেওয়া হয়েছে। ওই স্কুলের হাসান মোল্লা নামের এক শিক্ষার্থী অভিযোগ করে বলেন, স্কুলে ফরম পূরণ করতে আসলে স্যারেরা আমার কাছে ২ হাজার ৫শ টাকা চায়। কিন্তু আমি বোর্ডে নিদ্ধারিত ফি’র বাইরে কোন টাকা দিতে রাজি হয়নি।
দাঁতভাঙ্গা বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়, চর শৌলমারী বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়, যাদুরচর বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়, কলাবাড়ি বিবিসি উচ্চ বিদ্যালয়সহ বেশ কয়েকটির মধ্যে দাঁতভাঙ্গা স্কুল অ্যান্ড কলেজে ২ হাজার ৬শ টাকা করে ফরম পূরণে ১৯০ জন শিক্ষার্থীর ৪ লাখ ৯৪ হাজার টাকা, চর শৌলমারী উচ্চ বিদ্যালয়ে ২ হাজার ৩শ ৫০টাকা করে ৯৬জন শিক্ষার্থীর ২ লাখ ২৫ হাজার ৬শত টাকা, শৌলমারী এমআর স্কুল অ্যান্ড কলেজে ২ হাজার ৫শত টাকা করে ১৮০ জন শিক্ষার্থীর ৪ লাখ ৫০ হাজার টাকা উত্তোলন করেছে। এভাবে তিন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ফরম পূরণে ৪৬৬ জন শিক্ষার্থীর মোট ১১ লাখ ৬৯ হাজার ৬শ টাকা উত্তোলন করেছে।

দাঁতভাঙ্গা স্কুল অ্যান্ড কলেজের অধ্যক্ষ বদিউজ্জামান বলেন, ফরম পূরণ বাবদ বোর্ডের নিদ্ধারিত ফি’র বাইরে অতিরিক্ত টাকা নেওয়া হয়নি। নোটিশ বোর্ডের বিষয় জানতে চাইলে তিনি বলেন, হয়তো কারও আগের বকেয়া ফি রয়েছে তা মিলিয়ে নেয়া হতে পারে। অভিভাবকদের অভিযোগের ব্যাপারে তিনি বলেন, অভিভাবকরা ঠিক কথা বলেননি। তবে অধ্যক্ষ আরো বলেছেন, ফরম পূরণে ৩ হাজার ৬০০ টাকাও নিতে পারি। তাতে কোন সমস্যা নেই।

উপজেলা একাডেমিক সুপারভাইজার মোক্তার হোসেন বলেন, ফি নির্ধারণ করে মাধ্যমিক শিক্ষাবোর্ড ও শিক্ষা মন্ত্রণালয়। তবে নির্ধারিত ফি ছাড়া অতিরিক্ত ফি আদায় না করতে নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। নির্ধারিত ফি’র অতিরিক্ত নেয়া হচ্ছে কিনা তা আমরা মনিটরং করব।

উপজেলা নির্বাহী অফিসার আল ইমরান বলেন, কয়েকটি স্কুলের বিরুদ্ধে নির্ধারিত ফি’র অতিরিক্ত টাকা আদায়ের অভিযোগ পেয়েছি। বিষয়টি উপজেলা একাডেমিক সুপারভাইজারকে মনিটরিং করার জন্য নির্দেশনাও দেওয়া হয়েছে। অভিযোগ প্রমানিত হলে প্রতিষ্ঠান প্রধানের বিরুদ্ধে প্রযোজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

Exit mobile version