জলেশ্বরী

করোনাঃ দক্ষিণ এশীয় দেশের তথ্য চুরি প্রেক্ষিত

মাসকাওয়াত আহসান::

করোনার মতো এমন বিপদ তো আমাদের জীবনে কখনো আসেনি। এসময়টাতে প্রত্যেকের অভিন্ন লক্ষ্য; নিজে নিরাপদ থাকা আর অন্যকে নিরাপদ রাখা। এসময় তথ্যের স্বচ্ছ প্রবাহ জীবন বাঁচাতে পারে।

করোনা প্রতিরোধে চীন নিজের সাফল্য যেভাবে দাবি করেছিলো; তা চীনের ভঙ্গুর পণ্যের মতো ভেঙ্গে গেলো আজ; যখন একইদিনে তাদের দেশে করোনায় আগের দেখানো মৃতের সংখ্যা ৫০ শতাংশ বেড়ে গেলো।

চীনের মতো এই তথ্যচুরির প্রবণতা দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোতে রয়েছে। ইন্টারনেট যুগে কোন তথ্য চুরি করে লুকিয়ে রাখা যায়না- চীনের এই করোনায় মৃতের সংখ্যা রাতারাতি পালটে একটা অপেক্ষাকৃত বিশ্বাসযোগ্য সংখ্যা বসানোর চুরি ঢাকার অপচেষ্টাটি সে সত্যকে আরো দৃঢ়তা দিয়েছে। কাজেই দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোকে ‘তথ্য চুরি’ বন্ধ করতে হবে।

বাংলাদেশ-ভারত-পাকিস্তানে করোনায় মৃতের যে সংখ্যা সরকারিভাবে জানানো হয়েছে; এতে ব্যাপক জন-অনাস্থা রয়েছে। জ্বর-সর্দি-কাশিতে
বা হৃদযন্ত্র বন্ধ হয়ে মানুষের মৃত্যুকে করোনায় মৃত্যুর তালিকায় না রেখে মৃত্যুর সংখ্যা কম দেখাতে চেষ্টা করা হয়েছে। করোনায় মরতে মরতেও ‘তথ্য চুরির নেশা’ ছাড়ছে না দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোকে।

ভারতের পশ্চিমবঙ্গ-কেরালা রাজ্যে আর দিল্লিতে অপেক্ষাকৃত স্বচ্ছ তথ্য প্রবাহ ও আন্তরিক করোনা ব্যবস্থাপনা চোখে পড়েছে। আর দক্ষিণ এশিয়ায় করোনা মোকাবেলায় একমাত্র সফল দেশ ভুটান। সরকারের সত্য তথ্য প্রদান-সুষ্ঠু ব্যবস্থাপনা; জনগণকে এই ঘোরতর বিপদে স্বস্তিতে রাখার ক্ষেত্রে শতভাগ সাফল্য পেয়েছে ভুটান। ভুটানে নীতি নির্ধারকদের কখনো বিগ মাউথ হয়ে জিডিপি গ্রোথের সঙ্গে বড়াই করতে দেখিনি। তারা কথায় কথায় বলেনি, ভুটান সিঙ্গাপুর কিংবা সুইযারল্যান্ড হয়ে গেছে। ভুটান সবসময় ভুটান থাকতে চেয়েছে।

ভুটান তার উন্নয়নে প্রকৃতি-পরিবেশ আর মানুষের যৌথ জীবনটিকে বাঁচিয়ে রেখেছে। সুখের সূচক দিয়ে উন্নয়ন মেপেছে তারা। করোনা পরবর্তী পৃথিবীর উন্নয়ন মডেল কেমন হবে; তা জানতে ভুটানের উন্নয়ন মডেলটিকে জানতে হবে আরো বেশি করে।

ভুটানে যেহেতু পরিবেশ বিনাশী উন্নয়নের বড় গলা নেই; তাই সেখানে সুষম উন্নয়ন রয়েছে; যা মানুষ ও প্রকৃতির রক্ষাকবচ তৈরি করেছে।

ভুটান এশিয়ার অন্যান্য দেশের মতো জনগণের অর্থ খরচ করে যুদ্ধের সাজে সজ্জিত করেনি নিজেকে। ভুটান অর্থ ব্যয় করেছে করোনার বিরুদ্ধে মানবিক যুদ্ধে। ভুটান জানে, কোন রাষ্ট্রীয় ব্যয় জনগণের জীবন বাঁচাবে।

ভুটান কোন সাফল্যের দাবি করেনি; কারণ বিশ্বকাঁপিয়ে দেয়া; তাক লাগিয়ে দেবার ঘোড়া রোগ ভুটানের রাজনীতি ও সমাজনীতিতে নেই।

রাষ্ট্রিকভাবে সাদাসিধে স্বচ্ছ সৎ পরিবেশবান্ধব জীবন যাপন করলে একটা রাষ্ট্র কতো সীমিত অর্থ-সম্পদ নিয়ে জনগণের নিরাপত্তা ও সুখ নিশ্চিত করতে পারে; তার উজ্জ্বল উদাহরণ হয়ে রইলো ভুটান।

দক্ষিণ এশিয়ার চোরের খনিতে এমন সবুজ মানুষের খনিটি দেখে আনন্দ হয়। তথ্য চুরি থেকে ত্রাণ চু্রিতে অন্ধকার; দক্ষিণ এশীয় ব্যর্থ রাষ্ট্রগুলোতে করোনা এসে বার বার হাত ধোয়ার দৃশ্যটি “শেক্সপীয়ারের ম্যাকবেথ নাটকে লেডি ম্যাকবেথের বার বার রক্ত মাখা হাত ধোয়া”র বাস্তব-রূপায়ন যেন। আর চোরের মুখে সততার মুখোশ নিয়ে উন্নয়নের গান গেয়ে বেড়ানোর যন্ত্রণা থেকে বাঁচতে; করোনা যেন মিথ্যাবাদী দক্ষিণ এশিয়ার মুখে ঠুলি এঁটে দিয়েছে।

করোনাকালের প্রতিটি দিনের খরখরে বাস্তবতা, দক্ষিণ এশিয়ার প্রতারক নীতি -নির্ধারকদের ছদ্ম সাফল্য দেখাতে চুরি করে গোপন রাখা প্রতিটি তথ্য যেন উন্মোচন করে চলেছে। (ফেসবুক থেকে নেয়া)

Exit mobile version