উলিপুর প্রতিনিধি ::
উলিপুরে ভিজিএফের চালের বস্তা বদল করে নিম্নমানের চালের বস্তা ইউপিতে পাঠানোর অভিযোগ উঠেছে এক চাল ব্যবসায়ীর বিরুদ্ধে। এদিকে ব্যবসায়ী ইউপি থেকে খাদ্য গুদামে ফেরত পাঠানো চাল নিজের কাছে গোপনে জমা নিলেও দায় অস্বীকার করেছে। আবার খাদ্য বিভাগও এই নিম্নমানের চাল কিভাবে ইউপিতে গেল সে দায় নিতে রাজি হয়নি। ইতোমধ্যে বিষয়টির তদন্তও শুরু করেছে প্রশাসন।
কুড়িগ্রামের উলিপুরে ঈদ উপলক্ষে দুস্থদের ভিজিএফ এর ১৫০ বস্তা চাল নিয়ে শুরু হয়ে চালাচালি। ঘটনাটি তদন্ত করে দায়ীদের শনাক্ত করার ঘোষণা দিয়েছে প্রশাসন। খাদ্য গুদাম থেকে উন্নত মানের চাল বের হয়ে তা হাতিয়া ইউনিয়ন পরিষদে পৌছানোর পূর্বেই কিভাবে নিম্নমানের খাওয়ার অযোগ্য পঁচা চালে রুপান্তরিত হলো এ রহস্যের জট খুলছে না। শুক্রবার (১৬ জুলাই) দুপুরে উলিপুর উপজেলার হাতিয়া ইউনিয়ন পরিষদে এই ঘটনা ঘটে। হাতিয়া ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান বিএম আবুল হোসেন এ ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করেছেন।
উলিপুর উপজেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক আলাউদ্দিন বসুনিয়া জানান, ঈদ উপলক্ষে উপজেলার ১৩টি ইউনিয়ন ও একটি পৌরসভায় ৮৩০ মেঃটন ৫৬০ কেজি চাল ভিজিএফ এর জন্য বরাদ্দ দেয়া হয়। সে অনুযায়ী হাতিয়া ইউনিয়নে বিতরনের জন্য ৬৩ মেঃটন ২শ ১০ কেজি চাল বরাদ্দ হয়। শুক্রবার দুপুরে সরকারি খাদ্য গুদাম থেকে হাতিয়া ইউনিয়নের জন্য ভিজিএফ এর বরাদ্দকৃত প্লাষ্টিক বস্তায় খাদ্য মন্ত্রনালয়ের সরকারি সীল মোহরযুক্ত ৫০কেজি ওজনে প্রতিটি গাড়ীতে ১শ ৫০বস্তা করে ৬টি গাড়ীতে ৯শ বস্তা চাল পাঠানো হয়।
হাতিয়া ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান বিএম আবুল হোসেন জানান, সরকারি খাদ্য গুদাম থেকে ভিজিএফ এর বরাদ্দকৃত চাল ৬টি গাড়ীতে ৯শ বস্তা ইউনিয়ন পরিষদে নিয়ে আসা হয়। পরিষদের গুদামে চালের বস্তা নামানোর সময় ৫টি গাড়ীর চাল উন্নত মানের হলেও ১টি গাড়ীর ১শ ৫০ বস্তা চাল প্লাষ্টিকের পুরানা বস্তা ও সরকারি সীল না থাকায় সন্দেহ হয়। ওই গাড়ীর বস্তা গুলোর চাল খুবই নিম্নমানের খাওয়ার অযোগ্য পঁচা লাল রঙের হওয়ায় আমি ইউএনও ও খাদ্য কর্মকর্তার সাথে কথা বলে সরকারি খাদ্য গুদামে ফেরত পাঠাই।
উলিপুর উপজেলা ভারপ্রাপ্ত খাদ্য কর্মকর্তা (ওসি এলএসডি) শাহীনুর রহমান বলেন, খাদ্য গুদাম থেকে ইউনিয়ন পরিষদগুলোতে বরাদ্দকৃত ভিজিএফ এর চাল সরবরাহ করা হচ্ছে। গুদাম থেকে ভাল চাল পাঠানো হয়েছে। নিম্নমানের চাল সেখানে কিভাবে গেল তা আমার জানা নেই। তবে সংশ্লিষ্ট ইউপি চেয়ারম্যান বিষয়টি আমাকে জানিয়েছেন। বিষয়টি খতিয়ে দেখা হবে।
১৫০ বস্তা নিম্ন মানের চাল ভিন্ন বস্তায় কি করে সেখানে পৌছিল এ বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, চাল গুদাম থেকে বের হয়ে যাওয়ার পর বিষয়টি আমার দেখার দায়িত্ব না। ইউনিয়ন পরিষদ থেকে ফেরত পাঠানো নিম্ন মানের চাল পেয়েছেন কি না জানতে চাইলে তিনি বলেন না, আমি এ বিষয়ে কিছু জানি না।
জানা গেছে,এই ১শ ৫০ বস্তা নিম্ন মানের চালের দায় কেউ নিতে রাজি নন। খাদ্য গুদাম কর্মকর্তা বলছেন এ চাল আমি গুদাম থেকে সরবরাহ করিনি অপরদিকে গাড়ির চালক নাহিদ ইসলাম বলেছেন চালের বস্তা সরকারি গুদাম থেকে আনা হয়েছে। আর উপজেলা খাদ্য ব্যবসায়ী ও মিল চাতাল মালিক সমিতির আহবায়ক মাহফুজুর রহমান বুলেট ঝামেলামুক্ত ভাবে চালের টলি ছাড়িয়ে নিতে এবং বিষয়টি ধামাপাচা দেওয়ার চেষ্টা করছেন।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এজজন খাদ্য ব্যবসায়ী জানান, উলিপুর সরকারি খাদ্য গুদামের কর্মকর্তা ও ধান চাল ব্যসায়ীদের একটি সিন্ডিকেট দীর্ঘদিন থেকে এ ঘটনা গুলোর সাথে জড়িত। খাদ্য গুদামের কর্মকর্তার যোগসাজশে গুদাম থেকে উন্নত মানের চাল ইউনিয়ন পরিষদগুলোতে পাঠানোর সময় পথেই সিন্ডিকেট ব্যবসায়ীদের গুদাম থেকে ভালো চাল পরিবর্তন করে নিম্নমানের চাল গাড়িতে তোলা হয়।
ওই সূত্রটি আরও নিশ্চিত করেছন, হাতিয়া ইউপি থেকে ফেরত ১৫০ বস্তা চাল সরকারি গুদামে না দিয়ে সেই সিন্ডিকেট ব্যবসায়ী নিজের গুদামে নামিয়ে নিয়েছে। তিনি নিশ্চিত করেন খাদ্য ব্যবসায়ী মাহফুজুর রহমান বুলেট এই নিম্নমানের চালের মালিক। তিনি কৌশলে চালগুলো হাতিয়া ইউপিতে পাঠিয়েছে, আবার নিজের গুদামে নামিয়ে নিয়েছে।
খাদ্য ব্যবসায়ী ও মিল চাতাল মালিক সমিতির আহবায়ক মাহফুজুর রহমান বুলেট নিম্নমানের চালের মালিকানার বিষয়টি অস্বীকার করেন। তিনি এবিষয়ে সংবাদ প্রকাশ না করার জন্য বার বার অনুরোধ করে বলেন খাদ্য ব্যবসায়ীদের নেতা হিসাবে আমাকে অনেক কিছু করতে হয়। ব্যবসায়ীদের স্বার্থে আমি করেছি।
উপজেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক (অতিরিক্ত দায়িত্ব) আলাউদ্দিন বসুনিয়া জানান, এ বিষয়ে আমাকে তদন্ত করার দায়িত্ব দিয়েছে জেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক। তদন্ত করে দায়ী ব্যক্তি শনাক্ত হলে আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হবে। আমি এ ব্যাপারে তদন্ত শুরু করে দিয়েছি।
উপজেলা নির্বাহী অফিসার নূর-এ-জান্নাত রুমি বলেন, হাতিয়া ইউনিয়নে খাদ্য গুদাম থেকে নিম্ন মানের চাল সরবরাহের বিষয়ে চেয়ারম্যান আমাকে জানিয়েছেন। আমি ঐ চাল ফেরত পাঠাতে বলেছি। খাদ্য বিভাগের কর্মকর্তাদের সাথে এ বিষয়ে আমি কথা বলেছি। কোন ভাবেই নিম্নমানের চালের বিষয়টি মেনে নেয়া হবে না। এ ব্যাপারে তদন্ত করার জন্য উলিপুর থানার অফিসার ইনচার্জ ইমতিয়াজ হোসেনকে দায়িত্ব দিয়েছি। ঘটনা জানার পর ঐ ইউনিয়ন পরিষদে সরেজমিন পরিদর্শন করেছি এবং (ভিজিএফ এর) ভালো চাল দুস্থদের মাঝে বিতরণ তদারকী করেছি।
কুড়িগ্রাম জেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক মোঃ আবু বকর বলেন, বিষয়টি তদন্ত করার দায়িত্ব উলিপুর উপজেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রককে দেয়া হয়েছে। খাদ্য গুদামে এরকম অনিয়ম হওয়ার সুযোগ নেই। তবুও সবকিছু তদন্ত করে ব্যবস্থা নেয়া হবে ।