জলেশ্বরী

তালিকায় নাম থেকেও গেজেটে নাম নেই প্রয়াত মুক্তিযোদ্ধা লাল মিয়া

কুড়িগ্রাম প্রতিনিধি :

মুক্তিযুদ্ধে অংশ নিয়েছিলেন প্রয়াত মুক্তিযোদ্ধা লাল মিয়া। যাচাই-বাছাইয়ে ক-তালিকায় স্থানও পেয়েছিলেন। তারপর দীর্ঘ সময়। তিনি এখন পরপারে। এখনও গেজেটে নাম না আসায় হতাশ হয়ে পড়েছে কুড়িগ্রামের প্রয়াত মুক্তিযোদ্ধা লাল মিয়ার পরিবার।

দুই ছেলে ও এক মেয়ে নিয়ে অসহায় দিন যাপন করছেন তার স্ত্রী বৃদ্ধা রাবেয়া বেগম। মৃত্যুর আগে স্বামীর মুক্তিযুদ্ধের স্বীকৃতি দেখে যেতে চান তিনি।

১৯৭১ সালে ২৪ বছর বয়সে ভারতের কোচবিহারের কন্ট্রোলের হাটে প্রশিক্ষণ নেন লাল মিয়া। পরে ইপিআর সুবেদার আরব আলীর কোম্পানীর অধীনে কুড়িগ্রামের নাগেশ্বরী ও ভুরুঙ্গামীর বিভিন্ন এলাকায় মুক্তিযোদ্ধাদের খাবার রান্নার পাশাপাশি বিভিন্ন সময় সশস্ত্র যুদ্ধে অংশ গ্রহন করেছিলেন তিনি।

দেশ স্বাধীনের পর পরিবারের ভরন-পোষন যোগাতে বিভিন্ন জেলায় দিন মজুরের কাজ করে বেড়াতেন তিনি। এলাকায় সবাই তাঁকে মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে জানতেন। কিন্তু কোন রাষ্ট্রীয় সুবিধা পাননি প্রয়াত এ মুক্তিযোদ্ধা। স্বীকৃতি পাওয়ার চেষ্টা শুরু করার আগেই ২০১১ সালে ৬৪ বছর বয়সে নানা রোগে শোকে মৃত্যু বরণ করেন তিনি।

এরপর থেকে তাঁর পরিবার জেলার অন্যান্য মুক্তিযোদ্ধা, রাজনৈতিক নেতাসহ প্রশাসনের দ্বারে দ্বারে ঘুরেও এখন পর্যন্ত স্বীকৃতি পায়নি তার পরিবার।

জানা যায়, আবেদন পত্রের ভিত্তিতে জাতীয় মুক্তিযোদ্ধা কাউন্সিল থেকে পাঠানো তালিকা অনুযায়ী গত ২০১৭ সালের ৩০ এপ্রিল কুড়িগ্রাম সদর উপজেলা যাচাই-বাছাই অনুষ্ঠিত হয়। যাচাই-বাছাই কমিটি মুক্তিযোদ্ধা লাল মিয়াকে ক-তালিকায় অর্ন্তভুক্ত করে পুনরায় জাতীয় মুক্তিযোদ্ধা কাউন্সিলে প্রেরণ করে। যাহার ক্রমিক নং-১০৬৮৯১।

পরবর্তীতে ২০২০ সালের ১৮ অক্টোবর জাতীয় মুক্তিযোদ্ধা কাউন্সিল এষ্টেট ও কল্যাণ শাখা-২ এর সহকারী পরিচালক সরোয়ার হোসেন স্বাক্ষরিত চিঠি যাহার স্মারক নং- ৪৮.০২.০০০০.০৮.০০২.০০৪.২০.১০৫ এর প্রেক্ষিতে ক-তালিকা ভুক্ত লাল মিয়ার শুনানীর জন্য রংপুর বিভাগ মুক্তিযোদ্ধা যাচাই-বাছাই কমিটির আহবায়ক সংসদ সদস্য মো: মোতাহার হোসেনের নিকট প্রেরণ করে।

পত্রের আলোকে রংপুর বিভাগ মুক্তিযোদ্ধা যাচাই-বাছাই কমিটির আহবায়ক সংসদ সদস্য মো: মোতাহার হোসেন ২০২১ সালের ১৫ নভেম্বর স্বাক্ষ্য প্রমাণের ভিত্তিতে লাল মিয়াকে মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে প্রমানিত হওয়ার সুপারিশ করে জাতীয় মুক্তিযোদ্ধা কাউন্সিলে প্রেরণ করে। যাহার তালিকা নাম্বার-১১৮।

তাঁর স্ত্রী রাবেয়া বেগম জানান, আমার স্বামী প্রকৃত মুক্তিযোদ্ধা হওয়ার পরেও জীবিত থাকা অবস্থায় তিনি স্বীকৃতি পাননি। আমার স্বামীর মৃত্যুর পর আমি দুই ছেলে এক মেয়েকে নিয়ে অন্যের জায়গায় কোন রকমে কষ্টে দিন পার করছি। আমার জীবদ্দশায় আমি আমার স্বামীর মুক্তিযোদ্ধার স্বীকৃতি দেখে যেতে চাই।

মুক্তিযোদ্ধা লাল মিয়ার বড় ছেলে রাজু আহমেদ জানান, আমার বাবা লাল মিয়া যাচাই-বাছাইয়ে মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে প্রমানীত হওয়ার পরও গেজেটে নাম না আসায় আমরা হতাশ হয়ে পড়েছি। এ অবস্থায় ২০২২ সালের ৬ জুন আমি জাতীয় মুক্তিযোদ্ধা কাউন্সিলের চেয়ারম্যান বরাবর আপিল করি। যাহার আপিল আবেদন নং-২১৪। যা শুনানীর অপেক্ষমান রয়েছে। আমরা একজন প্রকৃত মুক্তিযোদ্ধার সন্তান হয়েও অসহায় দিন যাপন করছি।আমি আমার বাবাকে মুক্তিযোদ্ধার হিসেবে গেজেটে নাম অর্ন্তভুক্তির জন্য সরকারের দৃষ্টি আর্কষন করছি।

কুড়িগ্রামের বীর প্রতীক আব্দুল হাই সরকার জানান, প্রয়াত লাল মিয়া একজন প্রকৃত মুক্তিযোদ্ধা ছিলেন। মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে যাচাই-বাছাইয়ে লাল মিয়া ক-তালিকায় স্থান পেলেও কি কারনে গেজেট ভুক্ত হয়নি সেটা জানা নেই। আমি আশা করছি বিষয়টি সংশ্লিষ্ট দপ্তরের দেখা উচিৎ এবং তাকে মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে গেজেট ভুক্ত করা উচিৎ।

ক-তালিকায় থাকা অন্যান্য বীর মুক্তিযোদ্ধাদের নাম গেজেট ভুক্ত হলেও অদৃশ্য কারনে প্রকৃত বীর মুক্তিযোদ্ধা লাল মিয়ার নাম না আসার বিষয়টি বিবেচনা করে ব্যবস্থা নেয়ার দাবি জানান তার পরিবারসহ জেলার অন্যান্য বীর মুক্তিযোদ্ধারা।

Exit mobile version