কুড়িগ্রাম প্রতিনিধি::
জার্মানির বন বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ক্রপ মলিকুলার জেনেটিক্সের উপর পিএইচডি ডিগ্রি অর্জন করেছেন মো. নূরে আলম সিদ্দিকী। তিনি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়,গাজীপুর এর বায়োকেমিস্ট্রি এন্ড মলিকুলার বায়োলজি বিভাগের একজন সহকারী অধ্যাপক। তার পিএইচডি গবেষণার বিষয় ছিলো “Genetic variation in root architecture traits for nitrogen use efficiency in wheat and barley’
নূরে আলম সিদ্দিকী তার পিএইচডি গবেষণার বিষয়ে জানান, তাঁর গবেষণার মাধ্যমে ফসলের জমিতে নাইট্রোজেনের ব্যবহার কমিয়ে আনা ও অতিরিক্ত নাইট্রোজেন ব্যবহারে কৃষকের আর্থিক অপচয় কমানোসহ পরিবেশ ও পানি দূষণ রোধ সম্ভব হবে।
তিনি আরও জানান, গাছ সাধারণত শিকড়ের মাধ্যমে মাটি থেকে পুষ্টি উপাদান গ্রহণ করে। সেই পুষ্টি উপাদান গাছের উপরের অংশে ( কান্ড ও পাতায়) পৌঁছে দেয়ার জন্য নাইট্রেট ট্রান্সপোর্টার হিসেবে বিভিন্ন ধরনের জিন কাজ করে। আমরা আমাদের গবেষণায় উদ্ভিদে নাইট্রেট ট্রান্সপোর্টার হিসেবে সর্বপ্রথম ৬০টির মতো জিনের সন্ধান পেয়েছি। এরমধ্যে গম এবং বার্লিতে একই ধরনের একটি নাইট্রেট ট্রান্সপোর্টার জিন পেয়েছি এবং এর চারিত্রিক বৈশিষ্ট্য ও কার্যাবলী নির্নয় করতে সক্ষম হয়েছি। গবেষণায় দেখা যায়, যখন এই জিন গাছের মধ্যে উপস্থিত থাকে তখন নাইট্রোজেন বেশি দিলে সেটি তা সক্রিয়ভাবে নাইট্রেট গ্রহন (আপটেক) ও ট্রান্সপোর্ট করতে সাহায্য করে। কিন্তু যখন মলিকুলার প্রযুক্তি ব্যবহার করে এই জিনের কার্যক্রম নিষ্ক্রিয় করা হয় তখন কম পরিমাণ নাইট্রোজেন দিলেও উদ্ভিদ শিকড় বৃদ্ধির মাধ্যমে নাইট্রেট গ্রহণ ও ট্রান্সপোর্ট ত্বরান্বিত করে। মাঠ পর্যায়ে কম পরিমাণ নাইট্রোজেন প্রয়োগ করে দেখা গেছে, এটি উদ্ভিদের নাইট্রোজেন ব্যবহার সক্ষমতা বৃদ্ধি করছে।
উল্লেখ্য, মো: নূরে আলম সিদ্দিকী ১৯৮৭ সালের ২৮ ডিসেম্বর কুড়িগ্রাম জেলার অর্ন্তগত সদর উপজেলাধীন কাঠালবাড়ী ইউনিয়নের খোলারপাড় গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। স্থানীয় শিক্ষা প্রতিষ্ঠান থেকে ২০০৩ ও ২০০৫ সালে এসএসসি ও এইচএসসি সাফল্যের সঙ্গে উত্তীর্ণ হওয়ার পর ২০০৯ সালে হাজী মোহাম্মদ দানেশ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ব বিদ্যালয়ের কৃষি অনুষদ হতে স্নাতক, পরে ২০১২ সালে একই বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বায়োকেমিস্ট্রি এন্ড মলিকুলার বায়োলজি বিষয়ের উপর স্নাতকোত্তর ডিগ্রী সম্পন্ন করেন। এরপর ২০১১ সালে জাপানের জাইকা ও পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় কর্তৃক ঔঊঘঊঝণঝ (ঔধঢ়ধহ ঊধংঃ অংরধ ঘবঃড়িৎশ ভড়ৎ ঊীপযধহমব ড়ভ ঝঃঁফবহঃং ধহফ ণড়ঁঃয) প্রোগামে ভিজিটিং ফেলো হিসেবে জাপানের স্বনামধন্য বিশ্ববিদ্যালয় ও গবেষণা প্রতিষ্ঠানগুলো পরিদর্শনসহ বেশ কয়েকটি সেমিনারে অংশগ্রহণ করেন। পরবর্তীতে ২০১২ সালে শেখ ফজিলাতুন্নেছা মুজিব ফিশারিজ কলেজ (বর্তমান বিশ্ববিদ্যালয়), জামালপুরে বায়োকেমিস্ট্রি বিভাগের প্রভাষক পদে এবং পরে ২০১৩ সালে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়, গাজীপুরে বায়োকেমিস্ট্রি এন্ড মলিকুলার বায়োলজি বিভাগে প্রভাষক হিসেবে যোগদান করেন। ২০১৫ ও ২০২২ সালে যথাক্রমে সহকারী অধ্যাপক ও সহযোগী অধ্যাপক (এখনও যোগদান হয়নি) পদে পদোন্নতি লাভ করেন।
২০১৮ সালে সবচেয়ে মর্যাদাসম্পন্ন ফেলোশিপ একাডেমিক একচেঞ্জ (উঅঅউ) নিয়ে তিনি জার্মানির বন বিশ্ববিদ্যালয়ে প্লান্ট মলিকুলার জেনেটিক্স বিষয়ের উপর পিএইচডি করার জন্য যান। সেখানে দীর্ঘ চার বছর অত্যন্ত সফলতার সাথে গবেষণা করার পর গত ৫ অক্টোবর ২০২২ তাঁকে পিএইচডি ডিগ্রি দেয়া হয়। এর আগে তিনি পিএইচডি গবেষণায় চমৎকার অগ্রগতির জন্য ‘উঅঅউ ঙঁঃংঃধহফরহম অধিৎফ’ লাভ করেন।
বিশ্বের স্বনামধন্য এবং আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃত বিভিন্ন জার্নালে তার ৫০টির বেশি গবেষণা প্রবন্ধ প্রকাশিত হয়েছে। তাছাড়া তিনি কতিপয় আর্ন্তজাতিক জার্নালের রিভিউয়ার হিসেবে কাজের পাশাপাশি জাতীয় দৈনিক পত্রিকা ও ম্যাগাজিনে নিয়মিত নিবন্ধ লেখেন।
সংবাদ সুত্র :
আব্দুল খালেক ফারুক
কুড়িগ্রাম