জলেশ্বরী

বীরপ্রতীক তারামন বিবির ৪র্থ মৃত্যুবার্ষিকী

কুড়িগ্রাম প্রতিনিধি :

একাত্তরের রণাঙ্গনের বীর মুক্তিযোদ্ধা বীরপ্রতীক তারামন বিবির ৪র্থ মৃত্যুবার্ষিকী পালিত হয়েছে। ২০১৮ সালের ১ ডিসেম্বর তিনি কুড়িগ্রামের রাজীবপুর উপজেলায় নিজ বাড়িতে মৃত্যু বরণ করেন।
দিবসটি উপলক্ষে বৃহস্পতিবার তাঁর গ্রামের বাড়ী রাজীবপুর উপজেলার কাচারীপাড়া গ্রামের বাড়িতে ও কুড়িগ্রামের আরাজী পলাশবাড়ী এলাকার গুচ্ছ পাড়া গ্রামের বাড়ীতে মিলাদ ও দোয়া মাহফিলের আয়োজন করা হয়।

তারামন বিবি ছিলেন, রাজিবপুর উপজেলার কোদালকাটি ইউনিয়নের শংকর মাধবপুর গ্রামের প্রয়াত আব্দুস সোবহানের সাত ছেলেমেয়ের মধ্যে তৃতীয়। তিনি লেখাপড়ার সুযোগ পাননি। অন্যের বাড়িতে কাজ করতেন। ১৯৭১ সালে স্বাধীনতা যুদ্ধের সময় মুক্তিযোদ্ধাদের ক্যাম্পে রান্না করতেন ১৪ বছর বয়সী তারামন। রান্না করতে করতে অস্ত্র চালাতে শেখেন। তারপর রান্নার পাশপাশি রাইফেল হাতে মুক্তিযোদ্ধাদের সঙ্গে অংশ নেন সম্মুখ সমরে।

মুক্তিযুদ্ধে অসামান্য অবদানের জন্য তাকে বীরপ্রতীক খেতাব দেওয়া হলেও সে কথা তিনি দীর্ঘ ২৫ বছর জানতে পারেননি। ময়মনসিংহের আনন্দ মোহন কলেজের বাংলা বিভাগের অধ্যাপক বিমল কান্তি দে স্থানীয় মুক্তিযোদ্ধা সোলায়মান আলী এবং রাজিবপুর কলেজের সহকারী অধ্যাপক আব্দুস সবুর ফারুকীর সহায়তায় তাকে খুঁজে বের করেন। এরপর ১৯৯৫ সালের শেষ দিকে আনুষ্ঠানিকভাাবে তাঁর হাতে বীরপ্রতীক খেতাবের পদক তুলে দেওয়া হয়। দেশের বীরপ্রতীক খেতাবপ্রাপ্ত মাত্র দু’জন নারীর মধ্যে একজন হচ্ছেন তারামন বিবি।

তারামন বিবির জন্ম ১৯৫৭ সালে কুড়িগ্রামের চর রাজিবপুর উপজেলার শংকর মাধবপুর গ্রামে। ১৯৭১ সালে তারামন বিবি ১১নং সেক্টরে ছিলেন। তখন ১১নং সেক্টরের নেতৃত্বে ছিলেন সেক্টর কমান্ডার আবু তাহের। মুহিব হাবিলদার নামে এক মুক্তিযোদ্ধা তারামন বিবিকে মুক্তিযুদ্ধে অংশ নেওয়ার জন্য উৎসাহিত করেন। যিনি তারামনের গ্রামের পাশের একটি ক্যাম্পের দায়িত্বে ছিলেন। তিনি তারামনকে ক্যাম্পে রান্নাবান্নার জন্য নিয়ে আসেন। তখন তারামনের বয়স ছিল মাত্র ১৩ কিংবা ১৪ বছর। পরবর্তীতে তারামনের সাহস ও শক্তির পরিচয় পেয়ে মুহিব হাবিলদার তাকে অস্ত্র চালনা শেখান। এরপর একদিন দুপুরের খাবার খাওয়ার সময় তারামন ও তার সহযোদ্ধারা জানতে পারেন পাকবাহিনীর একটি গানবোট তাদের দিকে আসছে। তারামন তার সহযোদ্ধাদের সঙ্গে যুদ্ধে অংশ নেন এবং তারা শত্রুদের পরাস্ত করতে সক্ষম হন। এরপর তারামন অনেক সম্মুখযুদ্ধে পুরুষ মুক্তিযোদ্ধাদের সঙ্গে অংশ নেন। এ কারণে ১৯৭৩ সালে বাংলাদেশ সরকার তাকে বীর প্রতীক খেতাব প্রদান করে।

বীর প্রতীক তারামন বিবির ছেলে আবু তাহের জানান, বীরপ্রতীক খেতাবপ্রাপ্ত মাত্র দু’জন নারীর মধ্যে একজন হচ্ছেন আমার মা তারামন বিবি। একাত্তরের রণাঙ্গনের এই মুক্তিযোদ্ধার মৃত্যু বার্ষিকী উপলক্ষ্যে উপজেলা প্রশাসন থেকে কবর জিয়ারতের ব্যবস্থা করে। এছাড়া আমি নিজ উদ্যোগে পারিবারিকভাবে রাজীবপুরের বাড়ী ও কুড়িগ্রামের বাড়িতে দোয়া মাহফিলের আয়োজন করেছি।

এবিষয়ে রাজীবপুরের সাবেক মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার আব্দুল হাই সরকার বলেন, বর্তমান উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) সাহেব কমান্ডারের দায়িত্বে রয়েছেন। তাঁর উদ্যোগে বীরপ্রতীক তারামন বিবির কবরে পুষ্পস্তবক অর্পণসহ কবর জিয়ারত করা হয়।

Exit mobile version