রৌমারীতে উপজেলা আওয়ামীলীগের কাউন্সিলকে কেন্দ্র করে চরম উত্তেজনা

কুড়িগ্রাম প্রতিনিধিঃ

কুড়িগ্রামের রোমারী উপজেলা আওয়ামীলীগের কাউন্সিলকে কেন্দ্র করে প্রতিমন্ত্রী ও তার সমর্থক এবং স্থানীয় আওয়ামীলীগ নেতৃবৃন্দের উভয়পক্ষের চরম উত্তেজনা বিরাজ করছে। সাধারণ সম্পাদক পদে প্রার্থীর নাম দফায় দফায় পরিবর্তন, হট্টগোল, অবরুদ্ধ, দরজায় লাথি, দেহরক্ষী আহত, পথরোধ ও কেন্দ্রীয় নেতাদের সাথে অশোভন আচরণ এবং প্রতিমন্ত্রীর হুমকিতে কাউন্সিলে কমিটি ঘোষণা স্থগিতের অভিযোগ উঠেছে।

জানা গেছে, গত ২৯ নভেম্বর মঙ্গলবার রৌমারী সিজি জামান উচ্চ বিদ্যালয় মাঠে দীর্ঘ সাত বছর পর ত্রিবার্ষিক কাউন্সিলের আয়োজন করে উপজেলা আওয়ামীলীগ। কাউন্সিলের প্রথম অধিবেশন শেষে রৌমারী ডাকবাংলোতে দ্বিতীয় অধিবেশনে কেন্দ্রীয় আওয়ামীলীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য ও সাবেক মন্ত্রী শাহজাহান খান এমপি এবং কেন্দ্রীয় আওয়ামীলীগের সাংগাঠনিক সম্পাদক সাখাওয়াত হোসেন শফিকের উপস্থিতিতে সভাপতি পদে ১৩জন এবং সাধারণ সম্পাদক পদে ৩৬জনের জীবন বৃত্তান্ত জমা হয়। পরে সকল প্রার্থীর সাক্ষাতকার গ্রহণ করেন কেন্দ্রীয় নেতৃবৃন্দ এবং জেলা আওয়ামীলীগের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক। সাক্ষাতকার শেষে জেলা আওয়ামীলীগের সকল নেতৃবৃন্দের সাথে আলোচনা সাপেক্ষে দলে নতুন-পুরাতনের সমন্বয়ে সভাপতি হিসেবে প্রতিমন্ত্রী জাকির হোসেন এবং সাবেক সাধারণ সম্পাদক রেজাউল করিম মিনুর নাম বাদ দিয়ে সাধারণ সম্পাদক হিসেবে নতুন মুখ রাজু আহমেদ খোকার নাম উঠে আসে। এক পর্যায়ে জেলা আওয়ামীলীগের সভাপতি মোঃ জাফর আলী কাউন্সিল ত্যাগ করেন। প্রতিমন্ত্রী জাকির হোসেন সাধারণ সম্পাদক হিসেবে খোকাকে মেনে নিতে আপত্তি জানান। প্রতিমন্ত্রীর আপত্তির কারণে তার কাছে কেন্দ্রীয় নেতৃবৃন্দ সাধারণ সম্পাদক হিসেবে বিকল্প ব্যক্তির নাম চাইলে উনি হত্যা মামলার যাবজ্জীবন সাজাপ্রাপ্ত আসামী সাখাওয়াত হোসেন সবুজ এবং চেক জালিয়াতি চলমান মামলার আসামী আবু হানিফের নাম প্রস্তাব করেন। কেন্দ্রীয় নেতৃবৃন্দ দলের গুরুত্বপূর্ণ পদে দাগী আসামীদের মনোনীতের ব্যাপারে আপত্তি জানান। এতে প্রতিমন্ত্রী জাকির হোসেন কেন্দ্রীয় নেতৃবৃন্দ এবং জেলা আওয়ামীলীগের নেতৃবৃন্দকে ঘর থেকে বের হতে দিবেন না মর্মে হুমকি দেন। এ সময় প্রতিমন্ত্রীর স্ত্রী বেগম সুরাইয়া জাকির উত্তেজিত হয়ে কাউন্সিলে উপস্থিত কেন্দ্রীয় ও জেলা নেতৃবৃন্দকে গালাগালাজ করেন। অবস্থা ঘোলাটে দেখে কেন্দ্রীয় নেতৃবৃন্দ স্থান ত্যাগ করেন।
এ ব্যাপারে কুড়িগ্রাম পাবলিক প্রসিকিউটর ও জেলা আওয়ামীলীগের সহ-সভাপতি এসএম আব্রাহাম লিংকন জানান, নৈতিকতার দিক থেকে আওয়ামীলীগের কমিটিতে যাবজ্জীবন সাজাপ্রাপ্ত আসামীকে স্থান দিলে বিতর্কিত অবস্থা তৈরি হবে।

জেলা আওয়ামীলীগের সাধারণ সম্পাদক আমান উদ্দিন আহমেদ বলেন, কেন্দ্রীয় নেতৃবৃন্দের উপস্থিতিতে প্রতিমন্ত্রীর এমন অশোভন আচরণ কোনোভাবেই কাম্য নয়। প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনার নির্দেশনার আলোকে-ব্যক্তি নয় আমরা চাই দলীয় স্বার্থে হাইকমান্ডের সিদ্ধান্তে কমিটিতে ত্যাগী এবং পরিচ্ছন্ন নতুন মুখ আসুক।

এ ব্যাপারে আওয়ামীলীগের কেন্দ্রীয় সাংগাঠনিক সম্পাদক মোঃ শফিক রহমানের সাথে কথা হলে তিনি জানান, কাউন্সিলে স্থানীয় প্রতিমন্ত্রীর নেতৃত্বে বিশৃঙ্খলা, অনাকাঙ্খিত ও অদ্ভূত পরিস্থিতি তৈরি হওয়ায় এবং অনৈতিক আব্দারের কারণে রৌমারী কমিটি ঘোষণা করা হয়নি। দলীয় গঠতন্ত্রের আলোকে কমিটি ঘোষণা করা হবে। বিতর্কিত ব্যক্তি কমিটিতে স্থান পাওয়ার সুযোগ নেই। কারো ব্যক্তি স্বার্থে কমিটি ঘোষণা হবে না।

এ ব্যাপারে কুড়িগ্রাম রৌমারী উপজেলা আওয়ামীলীগের সভাপতি ও প্রতিমন্ত্রী জাকির হোসেনের সাথে মুঠোফোনে একাধিকবার ফোন করলে তার ফোনটি বন্ধ পাওয়া যায়। ফলে মন্তব্য নেয়া সম্ভব হয়নি।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *