ইসরাত জাহান ঊর্মি::
এমন না যে আওয়ামী লীগ আমলে বাংলাদেশ হিন্দুদের জন্য স্বর্গোদ্যান ছিল, মাত্র দুবছর বা তিন বছর আগের কথা আমরা মনে করতে পারি। পূজা মন্ডপে কোরান রাখছে রটায় দিয়ে সব জায়গায় ভাঙচুর করছিল৷ নবমী না দশমীর একটা দৃশ্য চোখে ভাসে, প্রতিমার ভাঙা টুকরা নিয়ে পুরোহিত মন্ত্র পড়তেছেন কারন রিচ্যুয়াল অনুযায়ী তারে পূজাটা শেষ করতে হইতো। পাশে ছলোছলো চোখে সেই দৃশ্য দেখতেছে শিশুরা।
এখনো একই ভয় আরো ভয়ঙ্করভাবে মূর্ত হচ্ছে। মাঝখান দিয়ে হাজারখানেক মানুষের প্রাণ চলে গেছে- কিছুই বদলায় নাই। সিএ এর বিশেষ সহকারী বক্তৃতায় বলেন, “এই আন্দোলন সকলের আস্থা পাইছিল কারণ আমরা সেক্যুলারদের মতো শুধু মোমবাতি জ্বালাইতে বলি নাই, বলছি, চাইলে আপনারা দোয়াও পড়তে পারেন…”তিনি বলেন নাই যে আমরা হিন্দুদের প্রার্থনা করতে বলছি বা বৌদ্ধদের…”
না অন্য ধর্মের কারো কথা তিনি উল্লেখ করেন নাই।
অন্যান্য ধর্মাবলম্বীরা সবসময়ই বাংলাদেশে “অন্যান্য”। এই ” অন্যান্য” থেকে তাদের একাত্ম ফিল করানোর কোনও আচার কেউ পালন করেন নাই।
এবার পূজা মন্ডপের সংখ্যা কমেছে। এতো এতো পাহাড়া দিয়ে কি আর উৎসব হয়? আমার জীবদ্দশায় আমি একটা উৎসবরে সংখ্যাগুরুর ভয়ে নাই হয়ে যেতে দেখলাম! কি আশ্চর্য! এই জীবনেই তো পূজা মানে ছিল প্রবীর মামাদের বাড়ির নাড়ু, পংকজ স্যারের বাড়ির লাবড়া-খিচুড়ি, প্যান্ডেলের মধুমালতী ডাকে আয় আর দশমীর মেলা! সেইখানে হিন্দু-মুসলমান ভেদ ছিল না। ইন্ডিয়ায় বাবরী মসজিদ ভাঙলে প্রবীর মামার মা দিদা বলতো, আরে ভয় কিসের, ঊর্মির মা আমারে পেটের মধ্যে করে রাখবে!
এখন শুনি, মন্ডপের ঢাকের আওয়াজ শোনা না কি পাপ! পূজা দেখা তো মুসলিমদের জন্য রীতিমতো বেদাত।
তারপরও বলি, ফিলিস্তিন সিরিয়া লেবাননের ঈদ করতে না পারা শিশুদের দোহাই, মানুষের ধর্মকর্ম বিশেষত উৎসবের উপর জুলুম কইরেন না। এই দেশে হিন্দুরা মজলুম। দরিদ্র হিন্দুরা আরো মজলুম। কারো উপর অত্যাচার না করার জন্য ধার্মিক হওয়া লাগে না জাস্ট মানুষ হওয়া লাগে।
আপনারা সংখ্যাগুরু হইছেন কিন্তু মানুষটাই হইতে পারলেন না!
সবাইরে শারদীয় দুর্গা পূজার শুভেচ্ছা।
লেখক- সাংবাদিক