জলেশ্বরী

ছুটি

ড. নজরুল ইসলাম খান::

ইট-পাথরের দালান-কোঠায় যখন আমরা অতিষ্ঠ-
সবুজের মাঝে তখন আমাদের জীবন কতটা প্রশান্ত!
ভেবেচিন্তে দেখেছি ভালোবাসার অদূরে এক সীমান্ত,
জীবনের পড়ন্ত বেলায় আকাশের চেয়েও অনন্ত!
আড়াল হলেই বেলা ফুরিয়ে আসে, সূর্য হয় ডুবন্ত
জীবনের পথে পথে হোঁচট খেয়ে যায় কত জমাট বাঁধা সিদ্ধান্ত!
কোথা থেকে আসে কোথায় চলে যায়-নেই তার বৃত্তান্ত
হিসেবে করে খোঁজা হয় না, কারা করে যেন চ-ক্রান্ত
এসব নিয়েই কেউ কেউ হয় বিভ্রান্ত, নড়েচড়ে বসে
ভালোবাসাটা যেন না হয় উড়ন্ত, যায় না যে ধসে
মেঘের গর্জন, বৃষ্টির আগমন- এসব ই জীবন
এরই মধ্যে ছিল তোমার-আমার পদ্যময় ভ্রমণ
বাতাসের আশায় কতো পেতেছি বুক তোমার আঙিনায়
উড়ে উড়ে গেছে, তাকায় নি ফিরে আমাদের অভিনয়
একান্ত আলাপে জমেছিল কত আড্ডা, বইয়ের জগতে
এ সংসারে কেউ নয় আপন, রাখতে হয় যে মগজে
তবু তৃষ্ণা জাগে এই মেঠোপথের দুপাশে, জঙ্গলে
ঘুরে বেড়াই দুই হাত ধরে অজানা প্রান্তরে, মঙ্গলে
রোজ তাকাই ঐ পথে-এই বুঝি হলো তোমার আগমন
পথের দূরত্ব বেড়ে গেলে নিজেকেই করতে হয় প্রশমন
অগণন তারার মাঝে ছিল তোমার-আমার বিচরণ
আজ আর তারা জ্ব-লে না, অভিযোগ কারণে-অকারণ
বিশ্বভ্রমাণ্ডের সব কিছু আজ ছুটিতে গেল
একা একা ছুটি কাটিয়ে কে যেন আনন্দ পেল!
এক ছুটি শেষ হয়ে গেলে আরেক ছুটি আসবে
গাছের ডালের পাখি উড়ে গেলে আরেক পাখি বসবে
শেষ ছুটি যেদিন হবে চাঁদও একা একা হাসবে
কারও মুখে হাসি থাকবে না, কেউ কেউ কাঁদবে!
এভাবেই জীবনের বর্ণমালায় সাজানো আমাদের জীবন
কখন যে নাই হয়ে যাই, খোঁজ রাখবে কি কেউ তখন?
ঝড়ের বেগে জীবন চলে, প্রকৃতি বড্ড হাসে
শেষ ছুটির দিনেও যেন তোমাকে পাই পাশে।

(অধ্যক্ষ, প্রাবন্ধিক, কবি ও কথাসাহিত্যিক)

Exit mobile version