পিতা একজনই

প্রচ্ছদ চৌধুরী::

বাবা, মা, ভাই, বোন, আত্মীয়-স্বজন সবার নিরঙ্কুশ অবদানে গড়ে ওঠে একটি আদর্শ পরিবার। একটি পরিবারে পরিবারের প্রত্যেকের অবদান খুবই গুরুত্বপূর্ণ। পরিবারের শিশু সন্তান থেকে শুরু করে বৃদ্ধ নানী দাদীর গুরুত্বও অপরিসীম। পরিবারের কোনো সদস্যের অবদানকে অস্বীকার করলে সেটি হয় চরম অকৃতজ্ঞতা। যেটা দীর্ঘদিন ধরে বাংলাদেশ নামক পরিবারের সাথে হয়ে আসছে।

বাংলার মসনদে যখন যিনি বসছেন তিনি বাকি সবার অবদানকে অত্যন্ত দাম্ভিকতার সাথে অস্বীকার করে কেবলমাত্র নিজের বা নিজ পিতা বা স্বামীর গুণগান করে সেই মহান ব্যক্তির সমস্ত অবদানকে ছোট করে ফেলছেন।

আমাদের মনে রাখা উচিত পরিবারের ভাই বোন মামা চাচা খালু এরা একাধিক হতে পারে। কিন্তু মা এবং বাবা একজনই।

আমি একাধিক বাবার সন্তান, একথা বললে সবাই আমার মানসিক অবস্থা নিয়ে প্রশ্ন তুলতে বাধ্য।

যুগ যুগ ধরে বঙ্গ বা বাংলা বা বাংলাদেশ নামক ভূখণ্ডের স্বাধিকার আন্দোলনে বহু মানুষ অবদান রেখেছেন। এদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান, শেরে বাংলা একে ফজলুল হক, মজলুম জননেতা মাওলানা ভাসানী, হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দী, তিতুমীর থেকে শুরু করে ইতিহাসের আরো শত সহস্র মহান ব্যক্তি। কিন্তু এরা সবাই পিতা নন। প্রত্যেকের আলাদা আলাদা গুরুত্বপূর্ণ অবদান আছে। যার যার সম্মান তাকে অবশ্যই দিতে হবে।

কিন্তু এই জায়গাটাতেই আমরা বারবার পিছিয়ে পড়ি। যখনই যে দল বা গ্রুপ এক প্রকার ক্ষমতা দখল করে, তাদের মনে হয় তারা ছাড়া বাকি সবাইকে মুছে ফেলতে হবে। যুগ যুগ ধরে এই প্র্যাকটিস হয়ে আসছে।

এজন্যই আমাদের রাজনীতিকে পরিবার তন্ত্র থেকে মুক্ত করতে হবে।

এতদিন পর্যন্ত দল মত নির্বিশেষে সবাই স্বীকার করে আসছেন বাঙালি জাতির স্থপতি বা জাতির পিতা একজন, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। এই বিষয়টা বিতর্কের ঊর্ধ্বে। কন্যার জুলুম, অত্যাচার, লুটপাটের দায়ে জাতির পিতা বদলে ফেলতে হবে এমন অসুস্থ চিন্তা সুস্থ ধারণার কারো মাথায় আসা উচিত নয়।

সন্তান দেখতে যেমনই হোক প্রতিটা বাবা-মার কাছেই তার সন্তান শ্রেষ্ঠ সন্তান। আমাদের জাতীয় সংগীত থেকে শুরু করে, জাতীয় ফুল, জাতীয় ফল সব কিছুই বাঙালি জাতির সন্তানের মত। আমার ভালো না লাগলেই সন্তান বদলে ফেলবো এমন ভাবনা মূর্খতা।

স্রোতে গা ভাসিয়ে দেয়া এবং লক্ষ্য পানে অবিচল থাকা এক কথা নয়। জাতিগতভাবে সম্ভবত আমরা কাজ বাদ দিয়ে আকাজ করতে বেশি আগ্রহী।

আমাদের দৈনন্দিন জীবনে বর্তমানে যে নাভিশ্বাস উঠেছে, তাকে মোকাবেলা করার জন্য এই মুহূর্তে যারা রাষ্ট্র পরিচালনা করছেন তাদের সর্বশক্তি নিয়োগ করা উচিত। কিন্তু সে বিষয়ে কারো মনোযোগ আছে বলে পরিলক্ষিত হচ্ছে না।

এক স্বৈরাচারের পতন যেন আরেক স্বৈরাচারের উত্থানের কারণ না হয় এ বিষয়ে আমাদের সতর্ক থাকা উচিত।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *