* কুরুক্ষেত্রের যুদ্ধ হচ্ছিল। কৌরব পক্ষের সেনানায়ক ছিল দ্রোণাচার্য। দ্রোণাচার্য ছিলেন কৌরব ও পাণ্ডব, উভয় পক্ষেরই অস্ত্র গুরু। কুরুক্ষেত্রের যুদ্ধ শুরু হলে দ্রোণাচার্য কৌরবদের পক্ষ অবলম্বন করেন। আচার্য অর্থ প্রফেসর। সুতরাং প্রফেসরের সঙ্গে যুদ্ধ করে পাণ্ডব ছাত্ররা পারবে না। পান্ডবদের অবস্থা খারাপ হয়ে যাচ্ছিল। তখন কি করা যায়, কি করা যায়- চিন্তায় পড়ে গেল সবাই। তখন কৃষ্ণ বলল তাকে তো সম্মুখ সমরে পরাজিত করা যাবে না, বুদ্ধি অবলম্বন করতে হবে। কী বুদ্ধি? তাকে গিয়ে বলতে হবে যে তার পুত্র অশ্বথামা যুদ্ধে মারা গেছে। তখন তিনি শোকে বিহ্বল হয়ে যাবেন। ওই সময় তাকে পাণ্ডবরা হত্যা করবে। কিন্তু দ্রোণাচার্যতো সবার কথা বিশ্বাস করবেন না। যুধিষ্ঠির ছিলেন সত্যবাদী, যুধিষ্ঠিরকে দিয়ে এই কথা বলালে তিনি বিশ্বাস করবেন। কিন্তু যুধিষ্ঠির তো মিথ্যা কথা বলবেন না, তিনি ছিলেন সত্যবাদী যুধিষ্ঠির। তখন কৃষ্ণ আবার বুদ্ধি দিল, অশ্বথামা নামে একটি হাতি আছে। সেটিকে মেরে ফেলো। যুধিষ্ঠির বলবে অশ্বথামা হতঃ- ইতি গজ। ইতি গজটা খুব আস্তে আস্তে বলবেন। সেটা দ্রোণাচার্য শুনতে পাবেন না। যুধিষ্ঠিরেরও মিথ্যা কথা বলা হলো না। কিন্তু দ্রোণাচার্য শোকে কাতর হয়ে যাবেন। এই সুযোগে তাকে হত্যা করা হবে। এক্সাক্টলি তাই করা হলো। এবং দ্রোণাচার্যকে, অন্যায় সমরে নিহত করা হলো। এটা হচ্ছে অর্ধসত্যের বিখ্যাত উদাহরণ।
এই অর্ধসত্যের উদাহরণ আমাদের দেশে বহুল প্রচলিত। রাজনীতি বলেন আর গৃহনীতি বলেন কর্মনীতি বলেন সর্বত্র বিরাজমান। এই অবস্থায় সত্যকে খুঁজে বের করতে বেশ কষ্ট হয়। এমত অবস্থায় মানুষ বিশ্বাস করে ফেলে। একই ঘটনার বিভিন্ন রকম ভার্সান বিভিন্নজন বিশ্বাস করে। এছাড়া রাজনৈতিক দল করলে কর্মীদের কিছু কিছু অসত্যকে বিশ্বাস করা ফরজ।
এটা প্রায় ধর্মের মত, প্রশ্ন করা চলবে না! Follow the leader.
আমরা ইংরেজদের কাছ থেকে স্বাধীনতা পাই১৯৪৭ সালে। ভারতবর্ষ ভারত ও পাকিস্তান নামে দুটি রাষ্ট্রে ভাগ হয়ে যায়। ভারত বছর খানেকের মধ্যে রিপাবলিক হয়ে যায়, সংবিধান প্রণয়ন করে, নির্বাচন করে এখন পর্যন্ত ফেয়ার নির্বাচন করছে সমগ্র দেশে এবং ২৫ টি রাজ্যে। আর যাদের নির্বাচনে দুর্নীতি নিয়ে কোন কথা হয় না। অথচ আমরা আরেকবার স্বাধীন হলাম স্বাধীনতার প্রায় অর্থ শতক পেরিয়ে গেল, কিন্তু এখন পর্যন্ত ফেয়ার নির্বাচন প্রায় করতেই পারলাম না। এর মাঝে নতুন একটি দেশ এসেছে যার নাম বাংলাদেশ। এই দেশের সত্য কথা দারুন মহার্ঘ বিষয়। খুব কষ্টে পেতে হয়। অর্ধসত্য দারুণ জনপ্রিয় এখানে। এরফলে যে ইতিহাস রচিত হয়েছে সেটা প্রায়ই, অসত্য, অর্ধ সত্য আর দুর্নীতি ও তঞ্চকতায় ভরা।
এতে করে সত্যকথা গুলি এই প্রজন্মের কাছে পৌঁছাচ্ছে না। অর্ধসত্য ভরা এই দেশ, জল খেতে গেলে পায় হলাহল। এই প্রজন্মকেতো আমরা সঠিক পথ দেখাতে পারি নাই। সত্য কথাগুলোও জানাতে পারি নাই। তবুও আমরা যেটা পারি নাই, ওরা সেটা করেছে। আমরা কি অন্তত ইতিহাসটাকে ঠিকঠাক করতে পারি ?
কিন্তু জঞ্জালের পরিমাণ এতই বেশি যে আমরা সেটাও পারি নাই। এই পুরনো মিথ্যা/অর্ধসত্য জঞ্জালকে মুছে ফেলতে হবে। নতুন করে লিখতে হবে সদ্ভাবে সততার সঙ্গে। নিষ্কলঙ্ক। এখনো অনেক সাক্ষী আছে। চেষ্টা করলে হয়তো সত্য ইতিহাস লেখা যাবে এটাই Reset button.
এতদিন ছিলাম প্রভুর কাছে, সোহাগমদে দোদুল কলেবর। আর কতদিন চটি-চাটা জীবন? এখন অন্তত কিছুটা মানুষ হই। এই তরুণ ছেলেদের দিকে দেখলে আমার লজ্জা করে। আমরা পারলাম না সোনার বাংলা গড়তে, প্রতিবাদটুকুও করতে পারি নাই, কাপুরুষের জীবন যাপন করেছি! ওরা পেরেছে! তবে এখনো পূর্ণ হয় নাই!
লেখক, গবেষক