কুড়িগ্রাম প্রতিনিধি: ১৪ মে, ২০২০
কুড়িগ্রাম জেলার উলিপুর পৌরসভার ৫ শতাধিক হতদরিদ্র দুস্থ মানুষের ভাগ্যে গত ৭দিনেও জোটেনি মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর উপহার সামগ্রী। ফলে সরকারের নেয়া মানবিক সহায়তা কার্যক্রম ভেস্তে যেতে বসেছে। সরকার দলীয় একটি প্রভাবশালী চক্রের বাঁধার মুখে পৌর মেয়র এ ত্রাণ সহায়তা দিতে পারছেন না। ফলে স্যাতস্যাতে স্টোর রুমে নস্ট হওয়ার আশংকা দেখা দিয়েছে ত্রাণ সামগ্রীর। এদিকে ত্রাণ না পেয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করে বৃহস্পতিবার (১৪ মে) তালিকাভুক্ত ৭নং ওয়ার্ডের বলদিপাড়া গ্রামের আমিনুল ইসলাম (৪০) ও রুহুল আমিন (৪২) এবং ৮নং ওয়ার্ডের জোনাইডাঙ্গা গ্রামের রওশন আরা (৪৫) ও এজাজুল (৩০) জানান, ‘শুনছি শেকের বেটি হাসিনা হামার জন্য তেরান পাঠাইছে। কিন্তুক সাতদিন ধরি ঘুরিয়াও তেরান পাবার নাগছি না।’
পৌর মেয়র তারিক আবুল আলা জানান, ১২জন ওয়ার্ড কাউন্সিলরদের মাধ্যমে যথাযথ যাচাই বাছাই করে উলিপুর পৌরসভার ৫ শতাধিক দুস্থ মানুষের তালিকা প্রস্তত করা হয়। পরে পরিষদের সিদ্ধান্ত মোতাবেক গত শনিবার (৯ মে) সকালে পৌরসভা চত্বরে মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর উপহার সামগ্রী (মানবিক খাদ্য সহায়তা) বিতরণের সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। সে মোতাবেক উপকারভোগীদের যথাসময়ে উপস্থিত থাকতে মোবাইলে খবর দেয়া হয়। প্রতি প্যাকেজে ছিল ১০ কেজি চাল, ৩ কেজি আলু, ১টি মিস্টি কুমড়া ও ১টি বিস্কুটের প্যাকেট। বিতরনের পূর্ব মূহুর্তে উলিপুর পৌর আওয়ামীলীগের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক পৌর মেয়রকে মোবাইল করে বিতরণ বন্ধ রাখতে বলেন। তারা জানান, লিস্ট যাচাই বাছাই করবো, তারপর বিতরণ হবে। এ হুমকীতে আমরা চরম একটা বিব্রতকর অবস্থায় পরে যাই। হতাশা ব্যক্ত করে তিনি বলেন, সরকারি মাল যদি সরকারি দলের নেতারাই বিতরনে বাঁধা দেয়, তাহলে আমরা কি করতে পারি। এদিকে এ ঘটনায় উপস্থিত লোকজন ত্রাণ পাবে না জেনে হট্টগোল শুরু করে। দীর্ঘক্ষণ অপেক্ষা করেও কোন সমাধান না হওয়ায় হতাশ হয়ে ফিরে যেতে হয় তালিকাভুক্ত দুস্থদের। তারা প্রতিদিন যোগাযোগ করছেন। কিন্তু আমরা ত্রাণ দিতে পারছি না সরকারীদলের প্রভাবশালী এ নেতাদের সম্মতি না থাকায়। আমরা গত বৃহস্পতিবার ত্রাণের সামগ্রি উত্তোলন করি। শুক্রবার রাতে সেগুলো প্যাকেটজাত করা হয়। এসময় স্থানীয় এমপি অধ্যাপক এম এ মতিন ও উপজেলা নির্বাহী অফিসার মো: আব্দুল কাদের’রও সম্মতি নেয়া হয়। এরপরও বিতরণ করা যায়নি। ত্রাণে কাচামাল সামগ্রী থাকায় তা পচে নষ্ট হওয়ার আশংকা রয়েছে।
উলিপুর পৌর আওয়ামীলীগের সভাপতি জাহাঙ্গীর আলম ত্রাণ বিতরণে বাঁধা দেয়ার কথা স্বীকার করে জানান, তালিকা যাচাই করে দেখা গেছে এরমধ্যে বেশ কয়েকজন পূর্বের সুবিধাভোগী রয়েছে। তাদেরকে বাদ দিয়ে নতুন করে তালিকা করা হয়েছে। উপজেলা নির্বাহী অফিসারের নির্দেশে আজকালের মধ্যে সিদ্ধান্ত নিয়ে মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর ব্যক্তিগত ত্রাণ সামগ্রি বিতরণ করা হবে।
এ ব্যাপারে উলিপুর উপজেলা নির্বাহী অফিসার আব্দুল কাদের জানান, বিষয়টি আমার জানা নেই। পৌরসভার জন্য স্বতন্ত্র কমিটি রয়েছে তারা এটা দেকভাল করবে। পৌরসভার ত্রাণ বিতরণে অন্য কোন পক্ষের বাঁধা দেয়ার সুযোগ নেই। এ ঘটনায় আমার কাছে কোন ধরণের অভিযোগ আসেনি।
বিষয়টি নিয়ে উলিপুর উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান ও উপজেলা আওয়ামীলীগের সাধারণ সম্পাদক গোলাম হোসেন মন্টু জানান, দলের কোন নেতা বা কর্মী নির্ধারিত ত্রাণ কার্যক্রমে বাঁধা দিতে পারে না। তারা তালিকা যাচাই বাছাই করতে যাবে কেন। এটা পৌরসভার কাজ পৌরসভাই করবে। পূর্বের তালিকা মোতাবেক দ্রæত ত্রাণ বিতরণ করা উচিৎ। তিনি আরো বলেন, মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার এ মানবিক সহায়তার উপহার সামগ্রি বিতরণে বাঁধা প্রদান কিংবা অনিয়ম কোনটিই বরদাশত করা হবে না।