কুড়িগ্রাম প্রতিনিধি :
কুড়িগ্রামে ব্রহ্মপুত্র, ধরলা, তিস্তা, দুধকুমারসহ ১৬টি নদ-নদীর পানি আবারো বৃদ্ধি পেতে শুরু করেছে। ফলে জেলার সার্বিক বন্যা পরিস্থিতির আরো অবনতি হয়েছে। পানিবন্দি জীবন-যাপন করছে অন্তত; চার লাখ মানুষ।
অন্যদিকে তিস্তার পানির প্রবল স্রোতে রাজারহাট উপজেলার ঘড়িয়ালডাঙ্গা ইউনিয়নের বুড়ির হাট এলাকায় ক্রস বারের মাটির ৫০ মিটার পানিতে ভেসে গেছে। ভাঙ্গন দেখা দিয়ে রাজারহাটের বিদ্যানন্দ ইউনিয়নের রতিরাম এলাকার ক্রস বারেও। এতে করে ঐ দুই ইউনিয়নের প্রায় ২০টি গ্রাম ভাঙ্গনের হুমকীতে পড়েছে। গত ৫ দিন ধরে জিও ব্যাগ ও বালুর বস্তা ফেলে ভাঙ্গন ঠেকানোর চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে পানি উন্নয়ন বোর্ড।
বন্যা কবলিত এলাকাগুলোতে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, বিশেষ করে ব্রহ্মপুত্র ও ধরলার পানি বিপদসীমার উপর দিয়ে প্রবাহিত হওয়ায় এই দুই নদ-নদীর অববাহিকার প্রায় আড়াই শতাধিক চরের ৩ লক্ষাধিক মানুষ দীর্ঘ ২৮ দিন ধরে নৌকায় ও ঘরের ভিতর পানি মধ্যে বসবাস করছে। এ অবস্থায় খাদ্য ও বিশুদ্ধ পানির সংকট তাদের জীবন দুর্বিসহ করে তুলেছে। ত্রাণের অভাবে খেয়ে না খেয়ে দিন পাড় করছে দুর্গম চরাঞ্চলের বন্যা কবলিত মানুষজন। পানি বাহিত রোগে আক্রান্ত হচ্ছেন এসব এলাকার বন্যা দুর্গতরা। স্বাস্থ্য ঝুকি বাড়ছে বন্যা দুর্গত এলাকার শিশুদের। চরাঞ্চলের চারনভুমিগুলো দীর্ঘদিন বন্যার পানিতে তলিয়ে থাকায় গৃহ পালিত পশুর খাদ্য সংকট দুর্ভোগ আরো বাড়িয়েছে বন্যা কবলিত এলাকার মানুষজনের।
নদ-নদীর পানি আবারো বৃদ্ধি পাওয়ার ফলে উঁচু বাঁধ, পাকা সড়ক ও বিভিন্ন আশ্রয় কেন্দ্রে আশ্রয় নেয়া বন্যা দুর্গত মানুষজন সহসাই ঘরে ফিরতে পারছে না।
উলিপুর উপজেলার বেগমগন্জ ইউনিয়নের মশালের চরের আকছেদ আলী ও রোজিনা বেগম জানান, প্রায় এক মাস ধরে পানির উপর বসবাস করছি। প্রতিদিন ভাবছি পানি কমবে কমবে কিন্তু পানি কমার কোন নাম গন্ধ নেই। এ পর্যন্ত কোন ত্রাণ পাইনি। ঘরের খাবারও শেষ হয়ে গেছে। অন্যের কাছে ধার দেনা করে সামান্য কিছু খাবার এনে এক বেলা খেয়ে দিন পার করছি।
সদরের যাত্রাপুর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান আইয়ুব আলী সরকার জানান, আমার ইউনিয়নের ২৫শ পরিবারের সবাই প্রায় ১ মাস ধরে পানিবন্দি জীবন-যাপন করছে। বন্যার শুরুর পর থেকে এরমধ্যে ১০৫০ পরিবারকে ১০ কেজি করে চাল দেয়া সম্ভব হয়েছে।
কুড়িগ্রামের জেলা প্রশাসক মো: রেজাউল করিম জানান, জেলার ৯ উপজেলার বন্যা দুর্গত মানুষদের জন্য এ পর্যন্ত ১৯০ মেট্রিক টন চাল, জিআর ক্যাশ ৯ লাখ টাকা, শিশু খাদ্যের জন্য ২ লাখ ও গো-খাদ্যের জন্য ২ লাখ টাকা বরাদ্দ দেয়া হয়েছে। যা বিতরণ করা হয়েছে। আগামী ২৫ জুলাইয়ের মধ্যে বন্যা কবলিত পরিবারগুলো ভিজিএফ’র ১০ কেজি করে চাল পাবে।
কুড়িগ্রাম পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী মো: আরিফুল ইসলাম জানান, মঙ্গলবার বিকেল ৩ টা থেকে বুধবার বিকেল ৩ টা পর্যন্ত গত ২৪ ঘন্টায় ধরলার পানি সেতু পয়েন্টে ২৪ সেন্টিমিটার বৃদ্ধি পেয়ে বিপদসীমার ৬৯ সেন্টিমিটার এবং ব্রহ্মপুত্রের পানি চিলমারী পয়েন্টে ১২ সেন্টিমিটার বৃদ্ধি পেয়ে বিপদসীমার ৫৩ সেন্টিমিটার, নুনখাওয়া পয়েন্টে ১৪ সেন্টিমিটার বৃদ্ধি পেয়ে বিপদসীমার ৪২ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। অন্যদিকে তিস্তার পানি কাউনিয়া পয়েন্টে ১৬ সেন্টিমিটার বৃদ্ধি পেয়ে বিপদসীমার ২৭ সেন্টিমিটার নীচ দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। রাজারহাট উপজেলার বুড়িরহাট ও রতিরাম এলাকার ক্রস বার রক্ষা চেষ্টা অব্যাহত রয়েছে বলেও জানান তিনি।