কুড়িগ্রাম প্রতিনিধি::
আদালতে নি:শর্ত ক্ষমা ও মুচলেকা দিয়ে এসে আবারো বিতকে জড়িয়েছেন কুড়িগ্রামের আলোচিত পাসপোর্ট অফিসের কর্মকর্তা কবির হোসেন । সবার ক্ষেত্রে চেয়েছিলেন তিনি এফিডেভিট, আর এখন মেডিকেল সার্টিফিকেট ছাড়া আবেদন নিচ্ছেন না এই কর্মকর্তা। ফলে হয়রাণিতে পরছেন সেবা গ্রহিতারা।
অভিযোগ উঠেছে, স্কুলে ক্লাস চলাকালিন অবস্থায় ফ্যানের আঘাতে চোখ হারানো আলোচিত সহকারি শিক্ষিকা শিরিনা আখতার জেলা আ লিক পাসপোর্ট অফিসে নিয়মতান্ত্রিকভাবে কাগজপত্র জমা দিয়ে ডেলিভারী স্লিপ গ্রহন করেন। কিন্তু মেডিকেল সার্টিফিকেটের দোহাই দিয়ে কাগজপত্র আটকে দেন বিতর্কিত ওই কর্মকর্তা। অভিযোগ উঠেছে শিরিনা আখতারের ভাই মোস্তাহিদুল হাসানের পাসপোর্টের কাগজপত্র আটকে দিয়ে দালালের মাধ্যমে দুই হাজার টাকা নিয়ে কাগজপত্র ছাড় নেয়া হয়। পরে মেডিকেল সার্টিফিকেট জমা না দেয়ার অজুহাতে শিরিনা আখতারের কাগজপত্র শুধু আটকে দেয়া হয়নি তাকে হয়রাণির জন্য ১৮ দিন পর পুলিশ ভেরিভিকেশনের জন্য কাগজপত্র পুলিশ বিভাগে প্রেরণ করেন। ডেলিভারী স্লিপ দেয়ার পরও বারবার হয়রাণি করা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে তার বিরুদ্ধে।
শিরিনা আখতারের স্বামী শেখ আলমগীর কবীর জানান, আমি গত ২ অক্টোবর পাসপোর্টের জন্য তিনজনের আবেদন কুড়িগ্রাম আঞ্চলিক পাসপোর্ট অফিসে বিধিমোতাবেক জমা প্রদান করি। শিরিনের ভাই মোস্তাহিদুলের জাতীয় পরিচয়পত্র অনুযায়ী নাম-ঠিকানা দিয়ে আবেদন করা হয়। তার পূর্বের পাসপোর্টে মোহাম্মদ বানান পুরোটা থাকায় এবং জাতীয় পরিচয়পত্রে সংক্ষেপে মো: থাকায় আবেদনটি ফেরৎ প্রদান করা হয়। পরে দালালের মাধ্যমে দুই হাজার টাকা প্রদানের পর আবেদনটি সংশোধন ছাড়াই গৃহিত হয়। পরবর্তীতে শিরিনা আখতারের আবেদনটি দেয়ার পর ডেলিভারী স্লিপ (৪২১৮০০০০২০৬৮০) প্রদান করা হয়। পাসপোর্ট প্রদানের তারিখ ছিল ১৩ অক্টোবর ২০২২ইং। কিন্তু অধ্যাবধি তার আবেদনটি প্রসেস করে ঢাকায় পাঠানো হয়নি। যা অনলাইন চেক স্টাটাস দেখে প্রতিয়মান হয়েছে। এনিয়ে গত ১৭ অক্টোবর সকাল ৯টা ৩২ মিনিটে উপ-সহকারি পরিচালক কবির হোসেনকে মুঠোফোনে কথা বললে তিনি জানান, মেডিকেল সার্টিফিকেট অফিসে জমা না দেয়ায় আবেদনপত্র প্রসেস করা হয়নি। পাসপোর্ট আইনে নাগরিকত্ব সনদ ও স্মার্ট কার্ড থাকলেই নাগরিকরা পাসপোর্ট পাওয়ার অধিকারী হবেন বলা হলেও এই কর্মকর্তা অবৈধভাবে মেডিকেল সার্টিফিকেট চাওয়ায় অনৈতিক ইঙ্গিত স্পষ্ট হয়ে উঠছে। তাকে মানবিক দিক হিসেবে বিবেচনা করার অনুরোধ করা হলেও তিনি কর্ণপাত করেননি। গত ২ অক্টোবর আবেদনপত্র জমা দেয়া হলে তিনি নট রিকোয়ার্ড লেখার পরও বুধবার (১৯ অক্টোবর) সাংবাদিকরা তার অফিসে কথা বলতে গেলে তিনি বিকাল সাড়ে ৪টার সময় হয়রাণি বাড়াতে পুলিশ ভেরিভিকেশনের জন্য কাগজপত্র পুলিশ বিভাগে পাঠান। এতদিন পর কেন কাগজপত্র পাঠানো হচ্ছে, এর সদুত্তর দিতে পারেননি তিনি।
জানা গেছে অফিসের মাস্টাররোলে কর্মরত মহসিন নামে এক কর্মচারী পুরো দালাল দিয়ে সেবা গ্রহিতাদের হয়রাণি করে প্রতিদিন হাজার হাজার টাকা উৎকোচ নিয়ে ভাগ-বাটোয়ারা করে খাচ্ছে বলে অভিযোগ রয়েছে।
এর আগে চলতি মাসের ১৩ অক্টোবর হলফনামার নামে সেবা গ্রহিতাদের হয়রাণি করার অভিযোগে কুড়িগ্রাম চীফ জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতের তলবে স্বশরীরে উপস্থিত হয়ে নি:শর্ত ক্ষমা চান কুড়িগ্রাম জেলা আঞ্চলিক পাসপোর্ট অফিসের উপ-সহকারী পরিচালক কবির হোসেন। তাতেও তার শিক্ষা হয়নি। আবারো একজন গুরুতর অসুস্থ শিক্ষিকার কাছ থেকে অবৈধভাবে অর্থ আদায়ের উদ্যোশে নিয়ম বহির্ভূতভাবে মেডিকেল সার্টিফিকেট চেয়ে আলোচনায় আসেন এই কর্মকর্তা।
শিরিনা আখতার বলেন, আবেদপত্র জমা দেয়ার সময তার চোখ নষ্ট হওয়ার সব প্রমাণপত্র দেখানো হয়। উনি কি কারণে মেডিকেল সার্টিফিকেট চাইছেন সেটি আমার বোধগম্য নয়। আমার চোখের ভিতরে অনবরত রক্তক্ষরণ হচ্ছে। দেরী করার ফলে আমিও মানসিকভাবে ভেঙ্গে পরেছি। এখন আমার খারাপ কিছু হলে এর দায়ভার কি উনি নিবেন!
১৭দিন পর মেডিকেল সার্টিফিকেট চাওয়ার বিষয়ে কুড়িগ্রাম জেলা আঞ্চলিক পাসপোর্ট অফিসের উপ-সহকারী পরিচালক কবির হোসেন সাংবাদিকদের জানান, ওনার চোখ নষ্ট হওয়ার কারণে মেডিকেল সার্টিফিকেট জমা দিতে হবে। দালালের বিষয়টি আমার জানা নেই।
এ ব্যাপারে জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ রেজাউল করিম জানান, সুস্থ, সবল ও অনৈতিক কোন অভিযোগ নেই এমন যে কোন নাগরিক পাসপোর্ট পাওয়ার অধিকার রাখে। পাসপোর্ট আবেদন করতে মেডিকেল সার্টিফিকেটের কোন প্রয়োজন নেই বলে জানান এই শীর্ষ কর্মকর্তা।