কেন যুক্তরাষ্ট্রেই এতো বন্দুক হামলা?
গত সপ্তাহে ২৪ ঘন্টার ব্যবধানে যুক্তরাষ্ট্রের টেক্সাস এবং ওহাইওতে ঘটে যাওয়া বন্দুক হামলা ছিল ভয়াবহ। আবার পরিসংখ্যানের দিকে তাকিয়ে আপনি বলতে পারেন, যুক্তরাষ্ট্রে এরকম হামলা মামুলি ব্যাপার। এ বছর প্রতিদিন যুক্তরাষ্ট্রে গড়ে একটি করে বন্দুক হামলায় অন্তত পাঁচজন করে মারা গেছেন।
২২ জনের মৃত্যু হওয়ার পরও টেক্সাসের এই বন্দুক হামলা যুক্তরাষ্ট্রের পঞ্চম বৃহত্তম বন্দুক হামলার ঘটনা। আর ভয়াবহতার দিক দিয়ে ওহাইওর বন্দুক হামলার অবস্থান ১১ তে।
পুলিশ বন্দুক হামলার তদন্ত করতে গিয়ে হামলার উদ্দেশ্য এবং সুযোগের বিষয়ে তদন্ত করে থাকে। কিন্তু হামলার কার্যপদ্ধতির ব্যাপারে কোন তদন্ত হয় না। যেমন- ওহাইওর বন্দুক হামলাকারী তার কৃতকর্মের পেছনে কোনো কারণ দেখাতে পারে নি। তার সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যমে প্রদত্ত তথ্যের ভিত্তিতে জানা যায়, সে বাম ভাবধারার একজন নারীবিদ্বেষী।
টেক্সাসের হামলাকারী অবশ্য বর্ণবাদী ক্ষোভ প্রকাশ করে একটি প্রচারপত্র দিয়েছেন। সেখানে হিস্পানিকদের সাথে শ্বেতাঙ্গদের পার্থক্য দেখাতে গিয়ে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের সাথে একই সুরে কথা বলেছে হামলাকারী।
মানুষ বন্দুক হামলার কারণ হিসেবে যা যা দাঁড় করায় তার মধ্যে আছে- মানসিক অসুস্থ্যতা, ভিডিও গেইম, সামাজে উঠতি বয়সীদের একাকীত্ব ইত্যাদি। যদিও বন্দুক হামলার আসল কারণ খুঁজে পাওয়া কঠিন। খুঁজলে আপনি টেক্সাসের বন্দুক হামলায় ডোনাল্ড ট্রাম্পের দায়িত্বহীন বক্তব্যকেও দায়ী করতে পারবেন। শুধু প্রেসিডেন্ট হিসেবে নয়, এক মতের বিরুদ্ধে অন্যমতের মানুষদের জড়ো করার ক্ষেত্রেও ট্রাম্প ভূমিকা রেখে চলেছেন। এভাবেই যুক্তরাষ্ট্রে বন্দুক হামলার সংস্কৃতি জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে।
আশির দশকে যুক্তরাষ্ট্রের পোস্ট অফিস গুলোতে বন্দুক হামলার ঘটনা ঘটতো। সাম্প্রতিক সময়ে বন্দুক হামলার নতুন টার্গেট শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান। বর্তমানে শ্বেতাঙ্গ ব্যক্তিদের সন্ত্রাসী কর্মকান্ডে জড়িত হওয়ার ঘটনা বেশি ঘটছে। তাদেরকে চালিত করছে এক তীব্র জাতি ও বর্ণ বিদ্বেষ। ২০১৫ সালের চার্লসটন চার্চ, পিটার্সবার্গের সিনাগগ এবং সর্বশেষ টেক্সাসের ওয়ালমার্টের বন্দুক হামলার ক্ষেত্রে আমরা অভিন্ন প্রেক্ষাপট দেখতে পাবো।
সাধারন মানুষের বলা কথার যদি কোন প্রভাব থেকে থাকে তাহলে প্রেসিডেন্টের কথার প্রভাব তো আরও প্রকট হবার কথা। তাই বন্দুক হামলার বিষয়ে ঘুরেফিরে ট্রাম্পের বক্তব্যের প্রসঙ্গ চলে আসে। তার বর্ণ ও জাতি বিদ্বেষী বক্তব্য যে কাউকে বন্দুক হামলা করার জন্য উস্কে দিচ্ছে না, সে কথা গ্যারান্টি দিয়ে বলা যায় না। যথেষ্ট সংখ্যক মানুষের সাথে যথেষ্টবার পরীক্ষা নিরীক্ষা করে বক্তব্য দিয়েছেন তিনি, অধিকাংশ সময়েই এর ফলাফল মারাত্মক।
যদিও এ কথা ঠিক ট্রাম্প ক্ষমতায় আসার আগেও বন্দুক হামলা ছিল এবং তিনি চলে যাওয়ার পরও হয়তো পরিস্থিতি একই থাকবে। টেক্সাসের হামলাকারী তার প্রচারপত্রে অভিবাসন প্রসঙ্গে উদ্বেগ দেখিয়েছে আবার একই সাথে করপোরেট ক্ষমতায়ন এবং পরিবেশ বিপর্যয় নিয়েও কথা বলেছে। আবার ওহাইওর হামলাকারীকে কোনদিক থেকেই ট্রাম্পের সমর্থক বলা যায় না। সেক্ষেত্রে এ প্রশ্ন থেকেই যাচ্ছে যে, কোন রাজনৈতিক আদর্শ মানুষকে সহিংস করে তুলছে নাকি সহিংস ইচ্ছাকে সে কোন রাজনৈতিক আদর্শের ছায়ায় বৈধ করে তুলছে।
বন্দুক হামলার উদ্দেশ্য খুঁজে বের করা কঠিন এবং কঠোর নীতি প্রণয়ন করাও কঠিন। কিন্তু বন্দুক হামলার সুযোগ বন্ধ করা তেমন কঠিন নয়। শ্বেতাঙ্গদের শ্রেষ্ঠত্বের দাবিদার সারা দুনিয়াতেই আছে এবং আছে তাদের সহিংস ইচ্ছার বাহার। কিন্তু একজন সহিংস মানুষের হাতে রান্না করার ছুরি বা বেসবল খেলার ব্যাট হাতে যতটা না ভয়ংকর তারচেয়ে অনেক বেশি ভয়ংকর স্বয়ংক্রিয় অস্ত্র হাতে। কারণ চোখের পলকেই সে ১০০ রাউন্ড গুলি ছুঁড়তে সক্ষম। আর এ পদ্ধতিটি সন্দেহাতীত ভাবে লোভনীয়।
কথা খুব স্পষ্ট যে, স্বয়ংক্রিয় অস্ত্রের মালিকানা নিয়ে ক্রাইস্টচার্চ হামলার পর নিউজিল্যান্ড যে ধরণের নীতি গ্রহণ করেছে, একই রকম নীতি গ্রহণ করলে যুক্তরাষ্ট্রে বন্দুক হামলার ঘটনা কমতে পারে। কিন্তু এভাবে সব বন্দুক হামলায় মৃত্যু রোধ করা সম্ভব হবে না। যেমন সম্ভব হবে না সংবিধান সংশোধন করার মাধ্যমেও। যুক্তরাষ্ট্রের বন্দুক হামলার সমস্যা, ব্রাজিলের বন উজাড় হওয়া বা চীনের বায়ু দূষণের মতোই ভয়াবহ। মানবসৃষ্ট পরিবেশ বিপর্যয় বন্ধ করা কঠিন এবং রাতারাতি পরিবর্তন সম্ভব ও নয়। তবে তাই বলে সাহসী মানুষের অভিযাত্রা থেমে থাকবে কেন?
(দ্য ইকনোমিস্ট অবলম্বনে)
কার্টেসীঃ রাবাংলা.নেট