হাতের কাছে ভরা কলস, তৃষ্ণা মেটে না

ফিচার-

বৃষ্টি তো নয় যেন জলপ্রপাত। হু হু করে, খলখল, ছলছল করে নেমে আসছে পানি। আকাশ থেকে মাটিতে। নদীনালা, খাল-বিল এর মধ্য উপচে উঠেছে। নদী এখন আর নদীতে নেই। চর ছাপিয়ে, ডাঙা ভাসিয়ে নদী এখন পূর্ণ লোকালয়ে।

চর বা নীচু একাকার বাড়ির চিহ্নও হারিয়ে যাচ্ছে। শহরের বাড়িঘর, বড় বড় অট্রালিকা, অফিস আদালত চারদিকে পানি নিয়ে পা ডুবিয়ে দাঁড়িয়ে আছে। উঁচু উঁচু রাস্তা – ঘাট গুলোতেও এখন নৌকায় চললে ঠিক ঠাক চলা যায়।

গত ৫ মাস ধরে চলছে বর্ষা। রোজ বছরের গড় বৃষ্টিপাতের হিসেবে রেকর্ড ভেঙে চলছে বৃষ্টি ।
চলছে ৫ ম বারের বন্যা। মূলতঃ বৃষ্টি থেকেই বন্যা। বন্যার পানির দীর্ঘস্থায়ীত্বের কারণও অতিবৃষ্টি। পানি কোনদিকে নামবে? সবখানেই থৈথৈ পাথার। সাগরের দিকেও তেমন টান নেই।

ফসল বাঁচাতে কৃষকের নিরন্তর লড়াইও এবার থেমে গেছে। প্রতিটি বন্যার পানি কমার সাথে সাথে কৃষকরা আনো ধান, ফেলো বীজ, লাগাও চারা এভাবে সামলাতে লেগে পড়েছিল তড়িঘড়ি। কিন্তু প্রতিবার ফিরে এসেছে বন্যা। বসে বসে গিলে খেয়েছে কৃষকের শ্রম-ঘামের স্বপ্নকে। ৫ম বারের বন্যা আর নীঁচু ভুমিতে নেই। এবার ডুবছে তো ডুবছে পুরো জনপদ। একরত্তি ফসল জেগে নেই চারদিকে।

করোনার ভয়ে সবাই যখন গৃহবন্দী, কৃষকরা মাঠেই ভিজেছে তখন। এবার আর যখন কোন আশা নেই, তখনও তাদের গৃহবন্দী হওয়ার সুযোগ নেই। তারা এখন বন্যায় তলিয়ে যাওয়া বাড়িঘর ছেড়ে একটুকরো শুকনো জমিনে পা রাখার আশায় ছোটাছুটি করছে।

পেটে খিদা, বুকে তৃষ্ণা, চোখে অনিদ্রা নিয়ে পানকৌড়ি মানুষ। ঘরে চাল নেই, চুলাও গেছে পানিতে তলিয়ে। চারদিকে অথৈই পানি, একফোঁটা খাবার পানি নেই কোথাও। ক্লান্ত ভেজা শরীর এলিয়ে দেওয়ার জন্য বিছানা না হোক, শুকনো মাটিটুকু তো দরকার। তাও নেই।

বাজার-হাটও পানিতে সাঁতরে পৌঁছাতে হয়। কিন্তু পণ্যমূল্যের ধারে কাছে সাঁতরে নাগাল পাওয়া যায় না। তাছাড়া বাজারে আছেই বা কি? সওদাগরের হুঙ্কার! নুন-চাল-তেলের যোগান নেই! আর সবজি বা মরিচ- পেঁয়াজ? সব নেই নেই।

ম্লান মুখে আকাশের পানে তাকানোরও সুযোগ নেই। আকাশ কি আর নিজের আছে নাকি! সময়টা শরৎ এসে গেছে ঠিকই। কিন্তু আকাশের নীল চোখে পড়েনি। তুলার মতো ভাসা ভাসা শাদা মেঘ উড়াউড়িও করেনি। দুরন্ত খেলুড়ে বালকটির ঘুড়িটিও এবার আকাশের মুখ দেখেনি। এবার আকাশ মানে ঘনকালো বৃষ্টির প্রপাত। পড়ছে তো পড়ছেই।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *