কুড়িগ্রাম প্রতিনিধি::
কুড়িগ্রামের রৌমারী উপজেলার শৌলমারী মতিয়ার রহমান স্কুল এন্ড কলেজে সরকারি নির্দেশনা ও জ্যেষ্ঠতা লঙ্ঘন করে বিদ্যালয়ের সর্বকনিষ্ঠ সহকারী শিক্ষককে প্রধান শিক্ষকের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। এ নিয়ে বিদ্যালয়টির সহকারী প্রধান শিক্ষক আলী আকবর উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) এবং উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসারসহ সংশ্লিষ্ট দফতরে লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন।
প্রসঙ্গত, রৌমারী উপজেলার শৌলমারী মতিয়ার রহমান স্কুল এন্ড কলেজের প্রধান শিক্ষক মো. শহিদুল ইসলাম চলতি বছর ৩১ জুলাই অবসর গ্রহণ করেছেন। সরকারি পরিপত্র অনুযায়ী প্রধান শিক্ষকের পদ শূন্য হলে কিংবা প্রধান শিক্ষক কোনও কারণে অনুপস্থিত থাকলে প্রতিষ্ঠানের সহকারী প্রধান শিক্ষক দায়িত্ব পালন করবেন। কিন্তু বিদ্যালয়টিতে সহকারী প্রধান শিক্ষক থাকার পরও গভর্নিং বডি সরকারি পরিপত্রের তোয়াক্কা না করে জ্যেষ্ঠতা লঙ্ঘন করে গত ১ আগস্ট বিদ্যালয়ের সর্বকনিষ্ট সহকারী শিক্ষককে ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষকের দায়িত্ব অর্পন করেছে।
প্রধান শিক্ষকের অনুপস্থিতিতে তার দায়িত্ব ভার পালন সম্পর্কিত শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের সরকারি পরিপত্রে (স্মারক নং: শিম/শা:১১/৩-৯/২০১১/২৫৬) বলা হয়েছে, বিদ্যালয়ের সহকারী প্রধান শিক্ষক থাকা অবস্থায় তাকে ভিন্ন অপর কোনও শিক্ষককে বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষকের দায়িত্বভার অর্পন করা যাবে না। এতে আরও বলা হয়েছে, কোনও বিদ্যালয়ে সহকারী প্রধান শিক্ষক না থাকলে জ্যেষ্ঠতম সহকারী শিক্ষক প্রধান শিক্ষকের দায়িত্বভার পালন করবেন।
সরকারি পরিপত্রে স্পষ্ট নির্দেশনা থাকার পরও ওই বিদ্যালয়ের গভর্নিং বডি সকল নীতি লঙ্ঘন করে জ্যেষ্ঠতার ক্রমে ১৪ তম সহকারী শিক্ষককে প্রধান শিক্ষকের দায়িত্ব প্রদান করেছে বলে অভিযোগ সূত্রে জানা গেছে। এতে করে ওই বিদ্যালয়ের শিক্ষকদের মাঝে অসন্তোষ দেখা দিয়েছে।
অভিযোগকারী সহকারী প্রধান শিক্ষক আলী আকবর বলেন,‘ শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের নীতিমালা ভঙ্গ করে টাকার বিনিময়ে একজন কনিষ্ঠ সহকারী শিক্ষককে প্রধান শিক্ষকের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। বিদ্যালয়ের সকল শিক্ষক এতে অসন্তুষ্ট।’ এতে করে বিদ্যালয়ের প্রশাসনিক ব্যবস্থা ও শিক্ষার পরিবেশ বিঘিœত হবে বলে দাবি করেন তিনি।
সহকারী প্রধান শিক্ষককে দায়িত্ব না দিয়ে কনিষ্ঠ সহকারী শিক্ষককে প্রধান শিক্ষকের দায়িত্ব দেওয়া সরকারি পরিপত্রের পরিপন্থি বলে স্বীকার করেছেন সদ্য বিদায়ী প্রধান শিক্ষক শহিদুল ইসলাম। তবে এর দায় তিনি পুরোপরি গভর্নিং কমিটির ওপর চাপিয়েছেন।
বিদায়ী এই প্রধান শিক্ষক বলেন, ‘ কমিটি যেভাবে রেজুলেশন করেছে আমি সে অনুযায়ী দায়িত্ব হস্তান্তর করেছি। এর দায় কমিটির, এর ব্যাখ্যাও দেবে কমিটি। তবে বিষয়টি সরকারি নীতিমালার পরিপন্থি।’
নীতিমালা লঙ্ঘনের বিষয়টি স্বীকার করেছেন বিদ্যালয়টির গভর্নিং বডির সভাপতি ও শৌলমারী ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান মো. নজরুল ইসলাম। তিনি বলেন, ‘ আমি এখন মিটিংয়ে আছি তাই বিস্তারিত বলতে পারছি না। শুধু এটুকু বলি, আমরা কেন এমন সিদ্ধান্ত নিয়েছে তা জানিয়ে স্থানীয় প্রশাসনসহ সংশ্লিষ্ট দফতরকে লিখিত ভাবে অবহিত করেছি। তারা হয়তো শিগগির আমাদের চিঠি পাবেন।’ পরিপত্রে কী উল্লেখ রয়েছে তা তিনি ভালো ভাবে জানেন বলেও দাবি করেন।
অভিযোগ পাওয়ার সত্যতা স্বীকার করে রৌমারী উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা আইবুল ইসলাম বলেন, ‘এভাবে দায়িত্ব অর্পণ আইনের সুস্পষ্ট লঙ্ঘন। আমি বিষয়টি নিয়ে ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছে লিখিত প্রতিবেদন দেবো।’
এ বিষয়ে জেলা শিক্ষা কর্মকর্তা (ডিইও) শামসুল আলম বলেন, ‘আমি অভিযোগ পেয়েছি। এটি আইনের সুস্পষ্ট লঙ্ঘন। উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তাকে তদন্ত করে প্রতিবেদন দিতে বলা হয়েছে। প্রতিবেদন পেলে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’
এক প্রশ্নের জবাবে তিনি আরো বলেন, ‘ কমিটির এ ধরণের সিদ্ধান্ত মেনে নেওয়া যায় না। এভাবে চলতে থাকলে কোনও বিদ্যালয়ে শৃঙ্খলা থাকবে না। তদন্তে অভিযোগের সত্যতা পাওয়া গেলে কমিটি ভেঙ্গে দেওয়ার সুপারিশ করা হবে। পাশাপাশি নীতিমালা লঙ্ঘন করে যে শিক্ষক প্রধান শিক্ষকের দায়িত্ব নিয়েছেন তার বিরুদ্ধে বিভাগীয় ব্যবস্থা গ্রহণের সুপারিশ করা হবে।’