কুড়িগ্রামে কন্যা সন্তান জন্ম দিলে মা ও সন্তানকে হত্যার হুমকি দিলেন সন্তানের বাবার। থানা পুলিশের সহায়তা নিলে মা সন্তান জন্ম দিলেন। কুড়িগ্রামের রৌমারীর চর বাঘমারা এলাকার আমিনুল ইসলামের স্ত্রী আমেলা বেগম (২৫) এই হতভাগা মা। আমেলার বিয়ের বয়স ১২ বছর। তাদের মেয়ে ফাতেমা (১১) ও কুলসুম (৯) নামের দুটি মেয়ে আছে। দুটি পুত্রসন্তান জন্মের পর পর মারা গেছে। এবার আবারও গর্ভবতি হলে আল্ট্রাসনোগ্রামে বাবা-মা জানতে পারেন কন্যা সন্তান আসছে।
আমেলার জানান, কন্যা সন্তানের কথা শুনে নানা নির্যাতনের শিকার হন তিনি। এমনকি স্বামী ও তার পরিবার হত্যার হুমকি দিয়ে আসছিল।
গত সোমবার সকালে প্রসব বেদনা নিয়ে আমেলা এক ক্লিনিকে ভর্তি হন। সেখানে গিয়েও তার স্বামী আমিনুল সন্তান ও প্রসূতিকে হত্যার হুমকি দেন।
এদিকে সন্তান প্রসবের পানি ভাঙতে শুরু করে, শুরু হয় প্রসব যন্ত্রণা। চিকিৎসকরা অস্ত্রোপচারের (সিজার) প্রস্তুতি নেন। এমন সময় আমেলা প্রায় দেড় কিলোমিটার হেঁটে পৌঁছান রৌমারী থানায়। সেখানে গিয়ে তিনি পুলিশের সাহায্য চান।
নিরাময় হাসপাতাল অ্যান্ড ডায়গনেস্টিক সেন্টারের ব্যবস্থাপনা পরিচালক তৌহিদুর রহমান বলেন,‘সোমবার সকালে প্রসব বেদনা নিয়ে আমেলা হাসপাতালে আসেন। রোগীর পানি ভাঙছিল। তিনি ভর্তি হওয়ার পরেই সিজারের প্রস্তুতি নেওয়া হয়। এ সময় স্বামীসহ কয়েকজন স্বজন আসেন। মেয়ে সন্তানের বিষয় নিয়ে তাদের দ্বন্দ্ব শুরু হয়। আমরা তাদের পারিবারিক বিষয় নিজেদের মেটাতে বলি। পাশাপাশি স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদের ডাকতে বলি। এরইমধ্যে সবার চোখ এড়িয়ে আমেলা অসুস্থ অবস্থায় থানায় চলে যান। পরে পুলিশ এসে বিষয়টা সমাধান করে।’
তিনি আরও বলেন, ‘থানা-পুলিশসহ বিভিন্ন পক্ষকে বিষয়টি জানিয়ে সমাধান করতে ৯ ঘণ্টা চলে যায়। ফলে পেটে থাকা শিশুর হার্টবিট কমে যাচ্ছিল। আমাদের এনআইসিইউ না থাকায় প্রসবপরবর্তী ঝুঁকি এড়াতে প্রসূতিকে অন্য হাসপাতালে পাঠিয়ে দেই। সর্বশেষ জানতে পেরেছি, শেরপুরের একটি ক্লিনিকে তার সিজার হয়েছে।’
রৌমারী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) রুপকুমার সরকার বলেন, ‘সোমবার বিকেলে থানায় এসে আমেলা জানান, মেয়ে সন্তান জন্ম নেবে জেনে তার স্বামী তাকে ও অনাগত সন্তানকে হত্যার চেষ্টা করছে। সন্তান ও নিজের জীবনের নিরাপত্তা চান ভীতসন্ত্রস্ত আমেলা।’
এরপর ওসি আমেলাকে আশ্বস্ত করে হাসপাতালে ফেরান। আর তার স্বামী আমিনুলকে নেওয়া হয় থানায়। তাকে কাউন্সিলিংয়ে জানানো হয় মেয়ে বা ছেলে জন্মদানে মায়ের কোন ভুমিকা নেই। বাবাই এর জন্য দায়ী। পাশাপাশি তাকে স্ত্রী ও সন্তানের কোনো ক্ষতি হয় এমন কাজ করতে বারণ করা হয়।
আমিনুল ইসলাম বলেন, আমি না জেনে অন্যায় করেছি। ওসি স্যার আমাকে বুঝিয়েছেন। মাইয়া বাচ্চা হইছে, আমি খুশি। আমি আর আমার স্ত্রীরে কিছু বলব না।’
ভুক্তভোগী আমেলা বেগম জানান, মেয়ে ও তিনি এখন ভালো ও নিরাপদে আছেন।